খুলনা: শীতে এখন শান্ত সুন্দরবন। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ভ্রমণের এখনই উপযুক্ত সময়।
প্রকৃতির এক অনন্য আশীর্বাদ এই সুন্দরবন। প্রকৃতি যেন তার আপন মহিমায় সাজিয়ে নিয়েছে এই বনকে। সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬ বার তার রূপ বদলায়। খুব ভোরে, দুপুরে, পড়ন্ত বিকেলে এবং সন্ধ্যায় বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন সাজে দেখা দেয় এই বনকে। মধ্য ও গভীর রাতে সৌন্দর্য আরেক রকম। আর যদি জ্যোৎস্না রাত হয়, তবে তো কথাই নেই। এর সবকয়টি রূপ দেখতে হলে আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এখানে আসতে হবে। তবে পরিবারসহ নিরাপদে ভ্রমণের জন্য শীতকালই শ্রেয়।
আর এখন শীতকাল হওয়ায় সুন্দরবনে প্রচুর পর্যটক আসছেন। চিত্রাহরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বানর, গুঁইসাপ, বন্য শূকর দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন তারা। বিশেষ করে সুন্দরবনের কটকা, কটকা বিচ, জামতলা সৈকত, কচিখালী, করমজল, হার বাড়িয়া, নীলকমল (হিরণপয়েন্ট), দুবলার চর, মান্দারবাড়িয়া সৈকত, তিনকোনা আইল্যান্ড, শেখেরটেক এলাকা পর্যটকদের কাছে ভীষণ পছন্দের।
সুন্দরবনের আকর্ষণ অফুরান, সে কারণে দেশের বাইরে থেকেও পর্যটকরা আসেন এ বনে। রহস্য-রোমাঞ্চে ঘেরা ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের বেশির ভাগ ট্যুর শুরু হয় খুলনা থেকে। ঢাকা থেকেও কিছু ট্যুর রয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যটকেরা ভ্রমণ করতে পারেন সুন্দরবন। সাধারণত ৩ দিন ২ রাতের কিংবা ৪ দিন ৩ রাতের ভ্রমণ প্যাকেজ হয়। বিলাসবহুল লঞ্চ রয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণে।
বাদাবন ইকো কটেজসহ সুন্দরবনের আশপাশ এলাকায় বেশ কিছু কমিউনিটি ট্যুরিজম গড়ে উঠেছে। কর্পোরেট, কাস্টমাইজড, ফ্যামিলি, স্টুডেন্ট, বাইকার সব ধরনের ট্যুরিষ্টরা এখানে আসতে পারেন।
সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে সম্পূর্ণ ইকো সিষ্টেমে তৈরি কটেজে থেকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়া, ভয় ভয় অনুভূতি নিয়ে বনের ছোট খালে নৌকা ট্রিপ, ফিরে এসে কটেজের ফলগাছ থেকে বিভিন্ন জাতের দেশীয় ফল, পুকুরে অবাধ সাঁতার, বড়শি/জাল দিয়ে পুকুর অথবা ঘেরে মাছ ধরা, গ্রাম্য হাট, জেলে পল্লী ঘুরে সন্ধ্যায় কটেজের বিচ চেয়ারে বসে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায় বাদাবন ইকো কটেজে থেকে। রাতে খোলা আকাশের নিচে তাবুতে থেকে চাঁদ-তারার লুকোচুরির সঙ্গে বার-বি-কিউ পার্টি জমানো যায়।
খুব ভোরে শিশির ভেজা মেঠো পথে সাইকেলে চড়ে সুন্দরবনের দৃশ্য দেখে এসে সারাদিনের খাবার ও ভ্রমণের প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে বোটে করে গহীন বনে হারিয়ে যাওয়ারও সুযোগ রয়েছে বলে জানান মোংলার বাদাবন ইকো কটেজের পরিচালক মো. লিটন জমাদ্দার।
তিনি জানান, শীতে এখন শান্ত সুন্দরবন। তাই সুন্দরবন ভ্রমণের এখনই উপযুক্ত সময়। এ কমিউনিটি ট্যুরিজমের সব সুযোগ সুবিধা থাকায় পর্যটকরা এখানে আসছেন।
উড়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্যাভেলসের সত্ত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম হিরন বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপদে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য শীতকালই উপযুক্ত সময়। যে কারণে অনেক পর্যটক ছুটে আসছেন বনে। ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন বছরে ঘুরে আসুন পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন থেকে। এ ট্যুরে হিরন পয়েন্ট, দুবলারচর, কটকা অফিস পার্ক, জামতলা সি-বিচ, ওয়াচ টাওয়ার, হাড়বাড়িয়া ও করমজল ঘুরে দেখা যাবে।
যেভাবে যাবেন: একদিনেই সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চাইলে করমজল পর্যটন কেন্দ্রে যেতে পারেন। ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসি/ননএসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া সায়দাবাদ থেকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, ফাল্গুনী পরিবহন, সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুলসহ বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত বিমানে যাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। খুলনায় নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মোংলা যাওয়া যাবে।
মোংলা থেকে করমজল লঞ্চ বা ট্রলারে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ হওয়ায় দিনে যেয়ে দিনে ফিরে আসার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া ভ্রমণে তুলনামূলক খরচও কম। খুলনার বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চ ঘাট থেকেও সুন্দরবন যাওয়া যায়।
ট্যুর অপারেটররা ভ্রমণের অনুমতিসহ সবকিছুর দায়িত্ব নেন। খুলনা ও মোংলায় রয়েছে এমন শতাধিক ট্যুর অপারেটর। ঢাকাতেও আছে। সুযোগ আছে খুলনার কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে সুন্দরবন দেখার। ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী এই শীতে আপনিও সময় করে বেড়িয়ে যেতে পারেন সবুজে ঘেরা সুন্দরবন থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬ , ২০২১
এমআরএম/এমএমজেড