মঞ্চে প্রধান অতিথি জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বসে আছেন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা।
কিন্তু বক্তৃতা শিল্পের পুরনো ট্র্যাডিশনের দৌলতে সময়ের অপচয়ে ভেতরে ভেতরে অস্বস্তিতে ভুগছিলেন ঠাণ্ডা মেজাজের এ রাজনীতিক।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলস বসে থাকার পর যখন সময় এলো নিজের বক্তৃতার তখন আর আয়োজকদের লাগামহীন বক্তৃতাবাজি নিয়ে চুপ থাকতে পারলেন না।
স্পষ্টই বুঝিয়ে দিলেন বক্তৃতাবাজির চিরাচরিত সিস্টেম পরিবর্তনের সময় এসেছে। প্রযুক্তির সঙ্গে আপডেট না থেকে বক্তৃতার মঞ্চ কাঁপানোর ঘটনার লাগাতার অবতারণায় রীতিমতো ক্লান্তই মনে হলো অল্প কথার এ মানুষকে।
আর মিনিট পনের নিজের বক্তৃতায় আয়োজকদের এমন কাণ্ডজ্ঞানের কঠোর সমালোচনা করেছেন। বললেন, অনুষ্ঠানের কার্ডে প্রায় ৪০ জন বক্তার নাম উল্লেখ আছে। তাদের প্রায় সবাই বক্তৃতা করেছেন।
এ স্টাইলের অনুষ্ঠান পরিবর্তন প্রয়োজন। ভারত, ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে বক্তৃতা করেন মাত্র একজন। ’ এসব ঘটনা প্রবাহ শনিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুর থেকে বিকেলের।
জানা যায়, ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দুপুর পর্যন্ত ত্রিশালে পৌঁছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী।
ত্রিশালে এ উচ্চ বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পৌর মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান।
এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর উপস্থিতিতে একে একে প্রায় ৪০জন বক্তা বক্তব্য রাখেন। এরপর সময় হয় তার বক্তৃতার। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে একবার মঞ্চ থেকে নেমে যান তিনি।
পরে দ্বিতীয়বার উপস্থিত হয়েও বক্তাদের দীর্ঘ তালিকার শেষ দেখতে হয়েছে তাকে। অতঃপর একই স্টাইলে অনুষ্ঠানের সভাপতি পৌর মেয়র আনিসুজ্জামানের তাকে উদ্দেশ্য করে নানা উপমায় ভূষিত করার প্রবণতাও তার বিরক্তির মাত্রা কমাতে পারেনি।
নিজে বক্তৃতার সময় দাঁড়িয়ে সৈয়দ আশরাফ বললেন, দু’টি অনুষ্ঠান। ময়মনসিংহে চার ঘণ্টা বক্তৃতা শুনে এখানেও সাড়ে তিন ঘণ্টা বক্তৃতা শুনলাম। সাড়ে সাত ঘণ্টা বক্তৃতা শোনা দুরূহ কাজ। এতে বক্তারাও খেঁই হারিয়ে ফেলেন।
জনসভায় এখন মানুষ বেশি হয় না। পুরনো কথার পুনরাবৃত্তি করলে কেউ আকৃষ্ট হয় না। একটি অনুষ্ঠানের কার্ডে ৪০জন বক্তার নাম থাকলে সেটি সভার জাতও না। ’
বক্তা কয়েকজন থাকতে হয়, কীভাবে মানুষের কাছে যেতে হয় এ বিষয়টিও বঙ্গবন্ধু তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন, এমন উদাহরণ তুলে ধরে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ৭০ সালের নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু ময়মনসিংহে এসেছিলেন।
আমাকে বলেছিলেন, ৫০ থেকে ৬০ জনকে নিয়ে জনসভা করবো। আমি আনন্দমোহন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ৫০ থেকে ৬০ জনকে জড়ো করলাম।
সেখানে আমি সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের শেখালেন কীভাবে মানুষের কাছে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু বললেন তোমরা ঘরে ঘরে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মানুষ সম্মান করে। তার নির্দেশে আমরা ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু এভাবেই আমাদের, দেশের মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন। তাই আমাদের শিখতে হবে কীভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করবো। ’
এখন সময়টা প্রযুক্তির উল্লেখ করে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, এ যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে যে শিখবে না সে মূর্খ। এটার ব্যবহার শিখলে সবকিছু আপনার হাতের মুঠোয়। এখন আর লাইব্রেরিতে গিয়ে বই খুঁজতে হবে না।
ইন্টারনেটে সব বই আছে। বই যদি ইন্টারনেটে চলতো তাহলে এতো বন উজাড় করতে হতো না।
কাগজ-কলমের যুগ শেষ হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের কাছে বক্তৃতা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। ’ আলোর গতিতে এসএমএস, ইমেইল চলে যায়। রাজনীতিতে টেকনোলজির ব্যবহার করতে হবে।
দেশের রাজনীতি কলুষিত হয়ে যাচ্ছে এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এখনকার ছাত্র সংগঠনগুলোর স্পিরিট নেই। সেই ধারও নেই। এটি শুধুমাত্র রাজনীতির নামে রাজনীতি।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাউল আলম, দুর্নীতি দমন কমিশনের ড. শামসুল আরেফিন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মোহিত উল আলম ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিব।
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
এমএএএম/এএটি