আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে। বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল অব্যাহত থাকায় এ সব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
বৃস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করেছেন এবং দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন।
ওই নেতারা আরও জানান, দলের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ইতোমধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিশৃঙ্খল ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বেশ কিছু ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি দলীয় কোন্দলে খুন হন নড়াইলের ভদ্রবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রভাষ রায়। গত ২ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দৈনিক সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধি আবদুল হাকিম (শিমুল)। একই দিন কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। ওই দিন রাতে পাবনার ঈশ্বরদীতে যুবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ২ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩/৪ জন আহত হন।
সম্প্রতি শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান মডেল কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হাসান খানকে প্রতিপক্ষ কুপিয়ে আহত করে। চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াসিন আরাফাত। এ ঘটনায় আরও দুই জন আহত হন।
গত ১৭ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় একটি জলমহাল দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত ও ২০ জনের মতো আহত হন। একই দিন শরীয়তপুরের জাজিরায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হন।
এর আগে গত ডিসেম্বরে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা আবু বকর সিদ্দিক নিহত হন।
গত ১৬ জানুয়ারি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে বড়মাছুয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কাইউম হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। গত ৩১ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জেড এ মাহমুদকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তিনি রক্ষা পেলেও এজন পথচারী নারী নিহত হন।
এছাড়া গত বছরজুড়েই বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনাগুলো যে পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে সেটা না। ১৯৭৫ এর পর দেশের রাজনীতিতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তৈরি করা হয়। চাওয়া-পাওয়ার রাজনীতি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। তাছাড়া দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে ব্যক্তি স্বার্থের জায়গা থেকেও কেউ কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে এসব ব্যপারে দল জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। কারা এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, কেন এসব করা হচ্ছে, এগুলো পরিকল্পিত কিনা সব ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এসকে/এমজেএফ