কিন্তু কি সেই সতর্কবার্তা? কোন কোন ক্রাইটেরিয়াকে মনোনয়নপ্রাপ্তির জন্য অপরিহার্য ভাবছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড? এতো দিন ভোটের মাঠ থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকা বিএনপি কি এ নির্বাচনে যাচ্ছে?
রোববার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব প্রসঙ্গ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
একটু আগেই সাংগঠনিক সফর শেষে চট্টগ্রাম থেকে ফিরেছেন।
শুরুতেই বললেন, দলের তৃণমূল পর্যায়ের সমস্যা সমাধান করে দেয়া হচ্ছে। আমরা জেলায় জেলায় সমস্যা সমাধান করছি। চট্টগ্রামে দলের ভেতরে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিলো তার সমাধান হয়েছে। শান্তিপূর্ণ সম্মেলন হয়েছে সেখানে। এখন আরো জেলায় যাবো।
কেবল কি আপনিই তৃণমূলে যাবেন, নাকি তৃণমূল নেতারাও আপনার কাছে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নীলফামারীর কয়েকজনকে দু’দিন আগে ডেকেছিলাম। সেখানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও ছিলেন। আরও অনেক জেলা যেমন যশোর, চুযাডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঢাকা ও সাভারের কয়েকজন এমপিকে নিয়ে বসেছি।
ওবায়দুল কাদের বলতে থাকেন, আসলামুল হক ও ইলিয়াস মোল্যাসহ বেশ কয়েকজন এমপিকে ডেকেছি। পর্যায়ক্রমে অধিকাংশ এমপিকে ডাকবো। ডেকে কিছু পরামর্শ আছে সেগুলো দেবো। কি কি সমস্যা তারা ফেইস করছেন সেটাও জানবো। আবার বিভিন্ন জায়গায় একাধিক প্রার্থী থাকতে পারেন, তাদেরও ভিন্ন ভাবে ডাকবো। কিন্তু, কাউকে ডাকার অর্থ এই নয় যে প্রেজেন্ট এমপিরাই আগামীতে মনোনয়ন পাবেন।
তাহলে ঠিক কাদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাবছে হাই কমান্ড? আর কি দোষেইবা মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে সিটিং এমপিরা পিছিয়ে পড়ছেন?
ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য কারো মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। অনেকই আছেন যারা গত নির্বাচনে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এখন অগ্রহণযোগ্য। নিজের লোকজনের কার্যকলাপের কারণেই তাদের মনোনয়ন থেকে বাদ দেয়া হবে। আর গডফাদার চরিত্র নিয়ে কেউ এমপি হতে পারবেন না।
তাহলে কি রাজনীতির মাঠে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যাওয়া সিটিং এমপিদের আর কোনো সুযোগই থাকছে না?
ওবায়দুল কাদের বলেন, জনমত নিজেদের পক্ষে আনতে ও নির্বাচনে জয়লাভ করতে হলে বেশকিছু এমপিকে আরও ইমপ্রুভ করতে হবে। তাদের সংশোধনেরও প্রয়োজন আছে। তাদের চারপাশে নিজস্ব লোকজনের কিছু সমস্যা আছে। এগুলোর ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছি। তারা যাতে নিজেরা ইমপ্রুভ করেন এবং জনগণের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারেন। তাহলে হয়তো মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
তাহলে আপনারা কিসের ভিত্তিতে সিটিং এমপিদের জনপ্রিয়তা যাচাই করছেন?
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী এমপিদের ওপর কয়েকটি জরিপ পরিচালনা করছেন। সরকারি এজেন্সি ছাড়াও বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, এনজিও, গবেষণা কর্মী অনেককে দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জরিপ রিপোর্ট নিচ্ছেন তিনি। ৬ মাস পর পর নতুন করে আবার জরিপ করা হচ্ছে।
কিন্তু বিভিন্ন কমিটিতে তো অন্ত:দ্বন্দ্বের খবর পাওয়া যাচ্ছে!
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দলে শৃঙ্খলা দরকার। ক্ষমতাসীন দলে এসব প্রবলেম থাকে। বিশেষ করে তৃণমূলে। তবে একটা সুবিধা যে, কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা সব ইউনাইটেড। সবাই এখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। একটা স্ট্রং টিম ওয়ার্ক গড়ে তুলেছি পার্টি প্রধানের নেতৃত্বে। আর যেহেতু সেন্ট্রালি সমস্যা নেই সে কারণে তৃণমূলে দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে কোন সমস্যা জিইয়ে রাখার সুযোগ নেই।
আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আশা করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এবং যথেষ্ট কনটেস্ট হবে। নির্বাচন খুব সহজ হবে না।
বিএনপির নির্বাচনে আসার ব্যাপারে এতোটা নিশ্চিত কি করে হচ্ছেন জানতে চাইলে আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সামনা-সামনি তাদের সঙ্গে হয়তো আলোচনা হয় না। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় আমাদের দেখা-সাক্ষাত তো হয়। তাদের কথাবার্তায় আমরা বুঝি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী সব দলের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মের নাম হচ্ছে বিএনপি। এ দলকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তারা শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। এ কারণে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। তবে উন্নয়ন ও অর্জনের কারণে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আমরা। অন্যরা ২৮ বছরে যা করতে পারেনি, শেখ হাসিনা সরকার গত সাড়ে ৮ বছরে তার চেয়ে বেশি করেছেন। তৃণমূলেও আমরা আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছি।
তৃণমূলে ভোটের রাজনীতি অত্যন্ত জটিল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, শহরাঞ্চলে উন্নয়নের চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা এগিয়ে থাকে। কিন্তু গ্রামীণ রাজনীতিতে উন্নয়নটা ফ্যাক্টর।
নির্বাচনে জেতার জন্য যে উন্নয়ন দরকার তা অর্জিত হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তৃণমূলে যা উন্নয়ন হয়েছে তাই যথেষ্ট। আর মেগা যেসব প্রজেক্ট চলছে সেগুলোতে জনগণের আস্থা আছে। উন্নয়ন অর্জনে ভোটের ঘাটতি হবে বলে ভাবছি না। যথাসময়ে পদ্মাসেতুর কাজও শেষ হবে।
আগামীতে আর ঠিক কি ধরনের সাংগঠনিক তৎপরতার কথা ভাবছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী ২০ মে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর খুব শিগগিরই ১০০ জনের মধ্যে সহ-সম্পাদক পদ ঘোষণা দেয়া হবে। তবে এবার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সহ-সম্পাদক দেয়া হচ্ছে। ঢালাওভাবে কারো ঢুকে পড়ার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৭
এসএ/জেডএম
** ওবায়দুল কাদের জানালেন, কাদের কপাল পুড়ছে!