ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাহরাইন

মানামা থেকে জাকারিয়া মন্ডল

সাগরে অচেতন সাইফুল এখন মিলিওনিয়ার

জাকারিয়া মন্ডল ও মোসাদ্দেক হোসেন সাইফুল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪
সাগরে অচেতন সাইফুল এখন মিলিওনিয়ার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মানামা থেকে: সাত মাস অচেতন থাকা বাংলাদেশি জেলে সাইফুলকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। খবরটা শুনেই থমকে গেলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মহিদুল ইসলাম।



ভর সন্ধ্যা। ১১ বছর বয়সী ছেলে আব্দুল্লাহর সঙ্গে বাড়ির লনে ফুটবল খেলছিলেন শ্রম কাউন্সেলর।

অ্যাম্বাসেডর কেএম মমিনুর রহমানের কাছ থেকে খবরটা যখন পেলেন সাইফুলকে তখন এয়ারপোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। চেক ইন শেষ। একটু পরই উড়বে প্লেন।

দ্রুত পাসপোর্ট নাম্বার সংগ্রহ করে যোগাযোগ করলেন সাইফুলের সঙ্গে। তাকে বললেন, বলো- তুমি যাবে না।

মহিদুল ইসলাম জানেন, কেউ কোনো দেশ ছাড়তে অস্বীকার করলে কোনো পাইলট তাকে প্লেনে তুলবে না।

কপালের ঘাম মুছে ছুটলেন তিনি। এয়ারপোর্টে যখন পৌঁছুলেন ততক্ষণে বোর্ডিং হয়ে গেছে। রানওয়েতে একটু পরই দৌড় শুরু করবে প্লেন।

প্লেন উড়লো ঠিকই, কিন্তু শ্রম কাউন্সেলরের সময়োপযোগী উদ্যোগে অফলোড করে দিলো সাইফুলকে। মাত্র ঘণ্টাখানের তৎপরতায় পাল্টে গেলো নাটকের অঙ্ক।

জানা গেলো, পারস্য উপসাগরে মাছ শিকার করার সময়ে অপর এক নৌকার ধাক্কায় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন চাঁদপুরের মনু গাজীর ছেলে সাইফুল। তার বাড়ি চাঁদপুর। বছর দু’আড়াই ধরে মাছ ধরছেন পারস্য উপসাগরে।

দুর্ঘটনার পর টানা সাত মাস হাসপাতালে অচেতন ছিলেন সাইফুল। জ্ঞান ফেরার পর মাত্র ৭শ’ দিরহাম (এক দিনার ২০৬ টাকা) হাতে ধরিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছিলো তাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, সাইফুলের এই সাত মাসের বেতন তুলে নিয়েছে অন্য কেউ। হেলথ ইনস্যুরেন্সের কোনো টাকাও তাকে দেওয়া হয়নি। তিনি দেশে চলে গেলে কিছুই পেতেন না।

কিন্তু এখন হেলথ ইনস্যুরেন্সের তিন হাজার সাতশ’ পঞ্চাশ দিনার পাবেন তিনি। সঙ্গে সাত মাসের বেতন। সব মিলিয়ে লাখ দশেক টাকা। মানে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সাইফুল এখন মিলিওনিয়ার।

ভাঙতে ভাঙতেও তাই ফের জোড়া লেগে গেলো সাইফুলের স্বপ্ন।

ঘটনাটা ২৯ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যার। মঙ্গলবার শেষ বিকেলে সাইফুলকে পাওয়া গেলো বাংলাদেশ দূতাবাসে। শ্রম কাউন্সেলর মহিদুল ইসলাম এখন তার কাছে সাক্ষাৎ দেবতা।

দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করে বললেন, তখন রাত। হিদ উপকূল থেকে ২ ঘণ্টা বোট বাইয়া সাগরের ভেতরে চলে গেছিনু আমরা ৩ জন। জাল টেনে তোলা ইচা (চিংড়ি) মাছ বাছতেছি তখন। হঠাৎ আর একটা নৌকা আইসা ধাক্কা দিলো আমাগোর নৌকারে। তারপর আর কিছু মনে নাই।

ওই দু্র্ঘটনায় অপর দু’জন সামান্য আহত হলেও দু’টো দাঁত ভেঙে যায় সাইফুলের। প্রচণ্ড আঘাতে মাথা ফেটে যায়। জ্ঞান হারান সাইফুল। তারপর হাসপাতালে অচেতন থাকেন সাত মাস। জ্ঞান ফেরার পর অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে তার নিয়োগকারী কোম্পানি তাকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়।

ফেটে যাওয়া মাথায় আঘাতের দাগ এখনও স্পষ্ট। উপরের সারির দু’টো দাঁত যে নেই তাও বেশ চোখে পড়ে। তবে সাইফুল এখন অনেকটাই সুস্থ। স্বপ্ন দেখছেন নতুন জীবনের।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪

** সাগরের পানি টেনে মরুর বুকে সবজি চাষ
** বাহরাইনে সবজি বাজারের দখল নিতে পারে বাংলাদেশ
** বাংলার শ্রমবাজার দখলে নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা-নেপাল!
** বাংলানিউজ, ওয়েলকাম টু বাহরাইন
** হরমুজ প্রণালী হয়ে আরব উপদ্বীপ ঘুরে বাহরাইন
** ‘ডেটলাইন বাহরাইন’, পৌঁছেছেন জাকারিয়া মন্ডল
** ‘ডেটলাইন বাহরাইন’, যাচ্ছেন জাকারিয়া মন্ডল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাহরাইন এর সর্বশেষ