ঢাকা: মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে। গুজবসহ নানা কারণে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে বা ব্যাংকে জমাই দেয়নি।
বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে ব্যাংকার্স সভায় তিনি এ তাগিদ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকার্স সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকদের পাশাপাশি সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) উপস্থিত ছিলেন। প্রতি তিন মাস পর এই ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে ভিন্ন ভিন্ন সূত্র এসব তথ্য জানায়।
সভা শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সভায় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সব বিষয় বলা যাবে না। ব্যাংক খাতে আস্থা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারণ, মানুষের হাতে নগদ অর্থ বেড়ে গেছে। তা ব্যাংকে ফেরত আনতে হবে। ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে। এমন সময়ে মানুষের হাতে নগদ অর্থ বাড়তে পারে না। ’
‘বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সরকারকে ঋণ দেওয়া কমানো হয়েছে। ব্যাংক খাতে তারল্য কমে গেছে। তবে খুব কমে যায়নি। কিছু ব্যাংক সমস্যায় আছে। গ্রাহক ঋণ চেয়ে পাচ্ছে না, এমন পরিস্থিতি হয়নি। প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বা সেবা কেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কম দামে পণ্য কেনা বন্ধ করতে হবে। তাহলেই হুন্ডি বন্ধ হয়ে যাবে। ’ বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বৈঠক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ২০২২ সালের মে মাসে মানুষের হাতে নগদ টাকা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। গত মে মাসে মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মানুষের হাতে প্রায় ১৪ শতাংশ নগদ অর্থ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রাও (ব্রড মানি) এক বছরে ১৭ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের মে মাসে ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ২২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা, গত মে মাসে তা কমে হয়েছে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা।
গভর্নর জানান, ব্যাংকের সব তথ্য প্রকাশ করা হবে।
আমদানি-রপ্তানির আড়ালে এখনো মুদ্রা পাচার হচ্ছে বলে সভায় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, নানা পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে তা এখন প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এখন দাম কম দেখিয়ে পণ্য আমদানি হচ্ছে। ১ ডলারের পণ্য আমদানিতে ৩০ সেন্ট পাঠানো হচ্ছে। বাকি অর্থ পাঠানো হচ্ছে হুন্ডিতে। ফলে হুন্ডি পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে অর্থ পাচারের বিষয়টি জড়িত। এই প্রবণতা কমাতে ব্যাংকারদের উদ্যোগ নিতে হবে।
অনেকে বলছেন, ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিল পরিশোধ বাকি আছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হলো, সরকারি-বেসরকারি উভয় খাত মিলিয়ে বকেয়া বিল রয়েছে সাড়ে ৩ বিলিয়ন বা সাড়ে তিন শ কোটি ডলার, বলা হয় বৈঠকে।
ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে প্রবাসী আয়ের অর্থ কিনলে ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বৈঠকে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা হয়, ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনায় আগেরবার দোষীদের জরিমানা জরিমানা করা হয়েছিল। এবার জরিমানা নয়, সরাসরি অপসারণ করা হবে।
এ বছর নির্বাচনের বছর। ব্যাংক নিয়ে নানা রকম গুজব ছড়িয়েছে। এ জন্য পেশাদারিত্বে সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়। তাই ব্যাংকারদের কোনো ধরনের গুজবে কান দেওয়ার দরকার নেই। রাজনীতিবিদেরা তাদের কাজ করবেন। ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা কমে গেলে বড় সমস্যা দেখা দেবে।
সভায় কৃষিভিত্তিক প্রকল্প ও পুনঃঅর্থায়ন-নির্ভর প্রকল্পে ঋণ বাড়াতেও ব্যাংকারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৩
জেডএ/আরএইচ