ঢাকা: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানত থেকে ঋণ বিতরণের হার বাড়ছে। সর্বশেষ সংগৃহীত আমানতের ৩৩ হাজার ৪৬২ কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ হয়েছে ১৩ হাজার ৪১ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৩৯ শতাংশ।
আগের প্রান্তিকে বিতরণ হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এক বছর আগে একই সময়ে ঋণ বিতরণের হার ছিল ২৭ দশমিক ২২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশ করা জুন প্রান্তিকের তথ্যে এসব উল্লেখ করা হয়েছে।
পল্লী অঞ্চলে মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। শুরুর দিকে পল্লী অঞ্চল থেকে সংগৃহীত আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণে হার খুবই কম ছিল। তবে ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। এটিকে ভালো ব্যাংকিং বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, যার বিশেষ আগ্রহে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু হয়।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে শুধু সঞ্চয়ই হচ্ছে না, ব্যাংকের সঙ্গে মিলে তারা ঋণও দিচ্ছে। আমরা এটিই চেয়েছিলাম। শুধু গ্রাম থেকে টাকা তুলে শহরে নিয়ে আসবে, এটি কোনো ভালো ব্যাংকিং হলো না। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামেও এসএমই ও কৃষি ঋণের মতো ছোট ছোট ঋণগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। এটি একটি ভালো লক্ষণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট এজেন্টের ৮৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ পল্লী অঞ্চলের। পল্লী অঞ্চলে আউটলেটের হার আরও বেশি। পল্লী অঞ্চলে আউটলেটের হার ৮৬ শতাংশ।
অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে, যেখানে ব্যাংকিং সুবিধা কম, এমন অঞ্চলে অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায় এজেন্ট ব্যাংকিং। এতে আর্থিক সুবিধা যেমন মানুষের নাগালের মধ্যে চলে গেছে, তেমনি কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। কম টাকায় এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঝামেলামুক্তভাবে অ্যাকাউন্ট বা হিসাব খোলার কারণে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মহিষকুন্ডীর ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ইনচার্জ মো. আল আমিন বাংলানিউজকে ফোনে জানান, হাতের নাগালে থাকায় এজেন্ট ব্যাংক মানুষের কাছে জনপ্রিয় উঠেছে। সহজেই মানুষ লেনদেন করতে পারছে। যেসব বাড়ির পুরুষ মাঠে বা কর্মস্থলে থাকে বা বিদেশে থাকেন, সেসব বাড়ির নারীরা বেশি এজেন্ট ব্যাংকিং করছেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামে যারা ঘরে টাকা রাখতেন, কিংবা বিভিন্ন ধরনের অবৈধ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন, তারা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বেশি টাকা রাখছেন। তারা এখন সঞ্চয় করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্টধারীর প্রায় ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ নারী এবং যাদের বসবাস পল্লী অঞ্চলে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে পুরুষের হার ৪৯ দশমিক ২১ শতাংশ। এই নারীরা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সঞ্চয় করছেন।
ড. আতিউর রহমান বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুটি কাজ হচ্ছে। প্রথমত, মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এটি ব্যাংকাররা চালাচ্ছেন না, চালাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান হচ্ছে, উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মানুষের কাছে চলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা একটি গবেষণায় দেখেছি, ২২ শতাংশ লোক বলেছেন, বাড়ির কাছে এজেন্ট ব্যাংকিং না এলে তারা কোনোদিনই কোনো ব্যাংকে যেত না। বিশেষ করে নারীদের ব্যাংকিং সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। তারা এখন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সঞ্চয় করছেন এবং প্রয়োজনমতো ঋণও নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীরা টাকাও পাঠাচ্ছেন। সুদুর প্রবাসে থেকে টাকা পাঠালে গ্রামে স্বজনের কাছে টাকা চলে যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি দিতেও এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবহার করা হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এই বহুবিধ ব্যবহার আরও সম্প্রসারিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক লাখ ২৯ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা রেমিট্যান্স বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ বিতরণ হয়েছে পল্লী অঞ্চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩
জেডএ/আরএইচ