ঢাকা: সব কাগজপত্র থাকার পরও সাড়ে ৪’শ গ্রাহকের বিমা দাবি পূরণে গড়িমসি করছে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। পলিস হোল্ডারদের অভিযোগ, দিগুন লাভ দেখিয়ে এজেন্টরা বিমা করিয়েছেন।
অন্যদিকে বছরের পর বছর কোম্পানির কর্মকর্তাদের পেছনে ঘুরছেন। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকাও দিচ্ছে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গ্রাহকরা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে অভিযোগও করেছেন। কিন্তু তাতেও বিমা দাবি পাচ্ছেন গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলো। কোম্পানি ও আইডিআর’এ সূত্রে এ তথ্য জানা।
জানা গেছে, ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে খুলনার বাগেরহাট জেলার ৩৬৫ এবং লালমনিরহাটের ৭৬জন এবং কুড়িগ্রাম জেলায় গ্রাহক মিলে ৪৫৫জন দরিদ্র পলিসি হোল্ডারদের বিভিন্ন মেয়াদী বিমার মেয়াদ পূর্ণ হয়। কিন্তু ২ থেকে ৪ বছর তাদের পেছনে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন বিমা দাবি ফিরে পায়নি।
বায়রা লাইফের বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ বনগ্রাম শাখার গ্রাহক আতিয়ার মল্লিকের (পলিসি নং-২৫৩০০০৪০) অভিযোগ, ২০০৪ সালে এজেন্ট রাইসুলের মাধ্যমে তিনি বিমা করেন। ১০ বছর মেয়াদী বিমার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৪ সালে। কিন্তু বিমা দাবির টাকা ও এজেন্ট কাউকে পাচ্ছেন না।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১০ হাজার টাকা করে দু’টি ক্ষুদ্র বিমা করি। আমাকে ২১ হাজার টাকা করে ৪২ হাজার টাকা দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন এজেন্টরা । এখন লাভ তো দূরের কথা আসল টাকাও পাচ্ছি না। একই কথা বলেন, নারিকেল বাড়িয়া শাখার গ্রাহক তৃপ্তিশীল (পিতা হরেন্দ্র শীল) গ্রাম-শিংজোর, পোস্ট-সেলিমগড় বাজার, উপজেলা মোড়েলগঞ্জ জেলা বাগেরহাট। তিনি বলেন, গ্রামের সবাই বিমা করছেন বলে ডিপিএস হিসেবে আমি বিমা করি। কিন্তু সব টাকাই যে খোয়া যাবে তা-তো জানতাম না।
এ দু’শাখা ছাড়াও মোড়েলগঞ্জ বৌলপুর, বর্শিবাওয়া বাজার, শৌলখালী ও কচুবুনিয়া এবং পার্শ্ববতী জেলা বরিশালের পিরোজপুর বলেশ্বর শাখা নিয়ে গঠিত বনগ্রাম ডিভিশনাল শাখার পলিসি হোল্ডাররাও বিমা দাবি পায়নি।
বাগেরহাট জেলার পাশাপাশি ২০১৩ সালে মেয়াদ শেষ হওয়া লালমনিরহাটের ৭৬জন বিমা গ্রাহক তাদের বিমা দাবি পাচ্ছেন না। তাদের একজন কলিম উদ্দিন ( ৮৮-০০০৯২১ নম্বর পলিসির)।
লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার এ বাসিন্ধা জানান, তিনি রংপুর সার্ভিসিং সেলের মাধ্যমে শাখা আফিসে বিমা পলিসি করেন। কিন্তু সেই বিমা দাবির পাওনা পাচ্ছেন না।
তার মতোই একই এলাকার শাহানাজ আক্তার, বাবু মিয়া, নারায়ণসহ গ্রাহক বিমা দাবির টাকা পাননি। এখন তারা ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আইডিআএ’র চেয়ারম্যান বরাবর বিমা দাবির টাকা পেতে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, আমরা বিমা গ্রাহকরা মেয়াদ-উত্তর বিমার টাকার না পাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারীর দিয়াডাঙ্গা গ্রামের কেরামত আলীর অভিযোগ, ২০০৪ সালে ২৮ নভেম্বর ৩৬ হাজার টাকার একটি বিমা পলিসি করেন। প্রিমিয়াম বাবদ প্রতি মাসে কেরামত কিস্তি দিতেন ৩০০ টাকা। ১০ বছর মেয়াদী এ পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৮ নভেম্বর ২০১৪ সালে। এখন মেয়াদ শেষ হলেও কোনো টাকা দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বায়রা লাইফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগগুলো সঠিক নয়। আমরা নিয়মিত গ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধ করছি।
চেয়ারম্যান আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, আগের এমডির দায়িত্বপালনের সময় কিছু সমস্যা ছিলো। তবে এখন আর সেই সমস্যা নেই। সঠিক কাগজপত্র নিয়ে এলে যার যা পাওনা তা পরিশোধ করে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, অক্টোরব ২৫, ২০১৬
এমএফআই/এসএইচ