ঢাকা: তিন দফা সময় বাড়ানোর পরও সরকারি বন্ড ও অনান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশনা মানছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।
কোম্পানিটির এ অনিয়ম দূর করতে আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি সরকারি বন্ড ও অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশনা মানছে না। তাই তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে’।
‘শেষবারের মতো আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ পরিপূর্ণ করতে না পারলে নিয়ম অনুসারে জরিমানা গুনতে হবে’।
সূত্র জানায়, বিমা আইন অনুসারে জীবন বিমা পলিসি হোল্ডারদের মেয়াদ পূর্তিজনিত দায়ের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হয়। কিন্তু সে বিধান পালন করছে না কোম্পানিটি, যা বিমা আইনের লঙ্ঘন।
এজন্য বিমা আইন-২০১০ এর ধারা ১০ এর (ঘ) ও (ছ) উপধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আইডিআরএ।
বিমা আইন-১৯৩৮ অনুসারে কোম্পানিকে তাদের সংগৃহীত প্রিমিয়ামের ৩০ শতাংশ সরকারি বন্ড ও সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে। বাকি ৭০ শতাংশ ব্যাংক, পুঁজিবাজারসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে। এ আইন পালনের জন্য গত ১৯ এপ্রিল, ৫ জুন ও ০৬ সেপ্টেম্বর তিন দফা বৈঠকের পর সময় বেঁধে দেওয়া হয় প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে। কিন্তু কোম্পানিটি তা পালন করেনি।
প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের নির্দেশনা মানতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘এটি ইসলামিক কোম্পানি। এখানে বিনিয়োগ করে ১শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাবে। এ কারণেই বিনিয়োগ করা হয়নি। তবে আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আইন মেনে চলার চেষ্টা করবো’।
জানা গেছে, বিনিয়োগের নির্দেশনা ছাড়াও কোম্পানির অন্যান্য অনিয়ম খতিয়ে দেখতে অডিটর (বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান) নিয়োগ করেছে আইডিআরএ।
নিয়োগকৃত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রাইম ইসলামী লাইফের ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের ব্যবসায়িক চিত্র নিরীক্ষা করবে। এতে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, বিনিয়োগ, প্রিমিয়াম আয়, তামাদি পলিসি, লাইফ ফান্ড ও সম্পদের প্রকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।
আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯-১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছরে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের তুলনায় নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চেয়ে ৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেশি দেখিয়েছে কোম্পানিটি। বিমা বিধিমালা-১৯৫৮ এর ৩৯ বিধি মতে, প্রথম বর্ষ ব্যবসার জন্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ৯০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু কোম্পানিটি নির্ধারিত সীমার চেয়ে ২০১৫ সালে ৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ২৪ কোটি ৩ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং ২০০৯ সালে ৪৯ লাখ টাকা বেশি খরচ দেখিয়েছে। যা বিমা বিধিমালা-১৯৫৮ এর বিধি ৩৯ এর লঙ্ঘন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
এমএফআই/এএসআর