শনিবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানের লেক শোর হোটেলে আয়োজিত ‘জঙ্গিবাদ ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ অভিমত দেন। বৈঠকটির আয়োজন করে রিজিওনাল অ্যান্টি টেররিস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (রাত্রি)।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, ড. হাফিজুর রহমান কার্জন, রাশেদা রওনক জাহান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুর রশীদ, ইসলামী ব্যাংকের নবনিযুক্ত পরিচালক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাংবাদিক প্রণব সাহা, শাবান মাহমুদ প্রমুখ। ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ইসলামী ব্যাংকে ১৬ কোটি মানুষের টাকা রয়েছে। যার পরিমাণ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাকের মুনাফার পরিমাণ অন্য সব ব্যাংকের মুনাফার যোগফলের চেয়ে বেশি। তাই সংস্কার করতে হবে পরিকল্পিতভাবে।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা সাধারণ মানুষ পায়নি। মওদুদীবাদী জামায়াতের লোকেরা পেয়েছে। এই অবস্থা থেকেও সরে আসতে হবে ব্যাংককে। শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন হলে হবে না। এটা মনস্তাত্তিক আদর্শের যুদ্ধ।
জঙ্গিবাদের শেকড় কেটে ফেলতে ইসলামী ব্যংকের সংস্কার একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। তবে আমূল সংস্কার সময় নিয়ে করতে হয়। বড় ধরনের সংস্কার হঠাৎ করেই গ্রহণ করতে পারে না সমাজ। ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গভেদে ইসলামী ব্যাংকে যেন সকলেই সমান সুযোগ পায়, সেটি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন ড. আজাদ।
মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ধর্ম কোনো সমস্যা নয়। তবে ধর্মের নামে রাজনীতি করলে সেটা সমস্যা। কারণ এই জঙ্গিবাদ ধর্মের আফিম দিয়েই তৈরি। আর অর্থ হচ্ছে জঙ্গিবাদের অক্সিজেন। কাজেই অক্সিজেন মুক্ত করা গেলে সে জঙ্গিবাদ মারা যায়।
ওয়ালিউর রহমান বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে জামায়াতের কাছে কোটি কোটি টাকা আসছে। জামায়াতের কাছে কোটি কোটি টাকা এলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শক্তভাবে ধরেছেন। তবে জামায়াত নিষিদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের গুটিকয়েকজন সেভাবে সহায়তা করছেন না। প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে সম্ভব নয় জামায়াতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের। আমাদের সবার উচিত প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করা।
ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রমে বাংলা ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. মীজানুর রহমান বলেন, ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রমে বাংলা ব্যবহার হচ্ছে না। সঞ্চয়ী হিসাব, প্রাথমিক হিসাব, সুদ ইত্যাদি বোঝাতে আরবি শব্দ ব্যবহার করা হয়। আরবির বদলে বাংলা ব্যবহার করতে হবে। আরবি শব্দের ব্যবহার করে দেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে ব্যবসা চালাচ্ছিল তারা।
অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করে মৌলবাদের উত্থান করেছেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটানো হয়। কাজেই সংস্কার সবখাতেই করতে হবে। আর ব্যাংকিং খাতের সংস্কারটাও অর্থবহ হতে হবে। কোনো আপোস করলে চলবে না।
জামায়াতমুক্ত করতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির নবনিযুক্ত পরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেছেন, আমরা কারও চাকরিতে হাত দেবো না। শুধু বলবো, মিটিং-মিছিল করতে যাবেন না। ইসলামী ব্যাংকে জনগণের আমানত ৭৫ হাজার কোটি টাকার ৪ শতাংশ যেতো জামায়াতের হাতে এসএমই ঋণ হিসাবে। আমরা সেটা চিহ্নিত করেছি। আর একটি টাকাও জামায়াতের হাতে যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭
এমএন/এমআইএস/ইইউডি/এসই/এইচএ/
আরও পড়ুন
**ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হবে
**প্রেসক্লাবে নারীর ক্ষমতায়ন চায়নি সাংবাদিকরাই!
** ইসলামী ব্যাংকে বাংলার ব্যবহার বাড়াতে হবে
**‘ইসলামী ব্যাংকে সংস্কার সময়োপযোগী পদক্ষেপ’
** ইসলামী ব্যাংকে পরিবর্তনে জামায়াতের অর্থ যোগান কমবে
** ব্যাংকিং খাতে অর্থবহ সংস্কার প্রয়োজন
** ইসলামী ব্যাংকে সব ধর্মের লোক নিয়োগের পরামর্শ
** ‘হুন্ডির মাধ্যমে জামায়াতের টাকা আসছে’
** জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করলে ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার হবে না
** বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের গাঁটছাড়া প্রমাণিত
** ‘আর একটি টাকাও জামায়াতের হাতে যাবে না’
** ইসলামী ব্যাংকে শিবির কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো
** ‘জঙ্গিবাদ ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার’ শীর্ষক গোলটেবিল শুরু