ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

বন্ড ছাড়ার অনুমতি পাচ্ছে জনতা ব্যাংক!

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
বন্ড ছাড়ার অনুমতি পাচ্ছে জনতা ব্যাংক!

ঢাকা: মূলধন ঘাটতি পূরণে সাত বছর মেয়াদী এক হাজার কোটি টাকার সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ছাড়ার অনুমতি পাচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক।

খেলাপি ঋণ ও কর পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ কমে যাওয়ায় ক্রমেই মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে জনতা ব্যাংকের। তাই আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি অনুযায়ী ব্যাসেল-৩ গাইডলাইন পরিপালন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনার জন্যও ব্যাংকের মূলধন বাড়ানো দরকার বলে সরকারের কাছে বন্ড ছাড়ার অনুমতি চেয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তরফ থেকে মতামত চাওয়া হলে বন্ড ছাড়তে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

‌এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ ওয়াহিদ উজ-জামান বাংলানিউজকে বলেন, মূলধন ঘাটতি পূরণে আমরা এক হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমতি চেয়েছি সরকারের কাছে।

এর আগে মূলধন ঘাটতি পূরণে বেসিক ব্যাংক দুই হাজার ৬শ’ কোটি ও রূপালী ব্যাংক ৫শ’ কোটি টাকার বন্ড ছাড়তে সরকারের কাছে আবেদন করে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সম্মতির পর বেসিক ব্যাংকের বন্ড ছাড়ার বিষয়টি এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। রূপালী ব্যাংকের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বন্ড চেয়ে অনেকেই আবেদন করেছে। বিষয়টি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন ও ঝুঁকিভারিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএর) রয়েছে ৮ দশমিক ০.৫ শতাংশ, ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী ১০ শতাংশ করতে হবে। একই সময় পর্যন্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে এক হাজার ১৮ কোটি টাকা।

প্রায় ১শ’ ৪২ কোটি টাকা টিআর-১ মূলধন উদ্বৃত্ত থাকলেও ন্যূনতম রক্ষিতব্য মূলধন (এমসিআর) ঘাটতি রয়েছে। ব্যাসেল-৩ নীতিমালার নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংকটিকে প্রায় ২শ’ ৪২ কোটি সংরক্ষণ (ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার) করতে হবে।

২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির শ্রেণীকৃত ঋণের হার ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়েছে দুই হাজার ৬শ’ ৮৬ কোটি টাকা। শ্রেণীকৃত ঋণের বিপরীতে উচ্চহারে প্রভিশন সংরক্ষণ করায় কর পরবর্তী মুনাফা হ্রাস পেয়েছে। ফলে আয় ধরে রাখা এবং বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি সংরক্ষণের ক্ষমতা কমে গেছে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সরকার সোনালী ব্যাংককে অনেক টাকা দিচ্ছে। সবাইকে টাকা দিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই যদি বন্ড ছেড়ে মূলধন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারে সেটা খারাপ হবে না। তবে এখন বন্ড বিক্রি করতে পারবে কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

বন্ড ছাড়ার বিকল্প পন্থায়ও জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি, ক্যাশ ডিভিডেন্ট দেওয়ার মাধ্যমে নতুন নিট মুনাফা বণ্টন না করে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি, শ্রেণীকৃত ঋণের মান উন্নয়ন ও সকল ঋণের ‍বিপরীতে জামানতের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রভিশন সংরক্ষণের পরিমাণ হ্রাস, ঝুঁকিভারিত সম্পদের পরিমাণ হ্রাস করেও মূলধন ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব বলে সরকারের কাছে মতামত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বন্ড ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোনো ব্যাংক সরকারের কাছে বন্ড ছাড়ার আবেদন করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব কিছু পর্যালোচনা করেই মতামত দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
এসএ/জিপি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।