জুলাই মাসের বিলের প্রায় ২৮ হাজার টাকা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করলেও বাকি ছিল মাত্র ৭৫ পয়সা। আর সেই ৭৫ পয়সা বকেয়ার সুদ হিসেবে পরবর্তী মাসের বিলের সঙ্গে ৮৭৫ টাকা ৯৪ পয়সা যোগ করে দিয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবি)।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) মশিউর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি আটটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি। ইউসিবির মত অন্য কোনো ব্যাংক আমার সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা করেনি’।
ক্রেডিট কার্ডের মুনাফা ও সুদের হার এবং অন্যান্য চার্জ আদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বকেয়া পরিমাণের সুদ চার্জ মাসিক ভিত্তিতে গণনা করা হবে। কোনো গ্রাহক পুরো অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তখন বকেয়া পরিমাণের ওপর সুদ ধরা হবে’।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখার পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ আগে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার ইউসিবি কল সেন্টারে কল করে অভিযোগ করেছেন মশিউর। সংশ্লিষ্টদের কাছে ই-মেইল বার্তাও পাঠিয়েছিলেন। কোনোটিতেই কাজ হয়নি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ফিরতি ই-মেইলে জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
পরবর্তীতে দ্বারস্থ হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের। সোমবার (২৮ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘অভিযোগ সেলে’ ফোন করে অভিযোগ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘প্রতি মাসের মতো ২০১৭ সালের জুলাই মাসেও আমার কাছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে যে এসএমএস এসেছে, তাতে আমাকে বিল প্রদান করতে বলা হয়েছে, ২৭ হাজার ৯০০ টাকা ৭৫ পয়সা’।
‘আমি বিল পরিশোধের নির্ধারিত সময় ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ২৭ হাজার ৯০০ টাকা দিয়েছি। আমার হিসাবে বকেয়া ছিল ৭৫ পয়সা। পরবর্তীতে আগস্ট মাসেও এসএমএস আসে মোট বকেয়া ১৩ হাজার ৭৮৯ টাকা ৭৯ পয়সা। খরচের চেয়ে বিল বেশি দেখে সন্দেহে হওয়ায় আমি ই-মেইলের বিল স্টেটমেন্ট খুলে দেখি, আমার বিলের সঙ্গে ৮৭৫ টাকা ৯৪ পয়সা সুদ যোগ করা হয়েছে’।
মশিউর আলম বলেন, ‘আমি রীতিমতো অবাক। ৩০ দিনে বকেয়া ৭৫ পয়সার সুদ ৮৭৫ টাকা ৯৪ পয়সা! এতো সুদ যোগ করায় আমি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের কল সেন্টারে কল করি। কল সেন্টার থেকে জানানো হয়, জুলাই মাসে ৭৫ পয়সা বকেয়া থাকায় পুরো টাকার (২৭ হাজার ৯০০ দশমিক ৭৫ টাকা) সুদ হয়েছে। যা আমার জানামতে, কোনো ব্যাংক গ্রাহকের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা করে না’।
‘এটিতো দিন-দুপুরে ডাকাতি করার মতো ঘটনা। কি বলেন? পরবর্তীতে আমি আবার যখন তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করি, তখন আমাকে বলেন, এটিই নাকি নিয়ম। একজন সচেতন গ্রাহক হিসাবে আমার মনে হয়েছে, গ্রাহকদের সঙ্গে এটি এক ধরনের জুলুম। কল সেন্টার থেকে আরও বলেন যে, ইউসিবি’র টার্মস্ অ্যান্ড কন্ডিশনে নাকি এটি লেখা ছিলো। যা আমি না পড়ে স্বাক্ষর করেছি’।
‘তবে ক্রেডিট কার্ড পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে একজন গ্রাহকের বকেয়া টাকার ওপর সুদ আরোপ করা যাবে। কিন্তু ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক সে নিয়মের তোয়াক্কা না করে আমাদের মতো গ্রাহকের ওপর নির্বিচারে বিভিন্ন ধরনের চার্জ আরোপ করে প্রতারণা করে যাচ্ছে, যা একদমই গ্রহণযোগ্য নয়’।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোনের কল ধরেননি। তবে ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আশিক মুহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের কার্ড ডিভিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই গ্রাহকের নাম বলুন। টাকার পরিমাণ জেনে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৭
এসই/এএসআর