ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্যাংকিং

ব্যাংকের খেলাপি ঋণের জন্য সরকার দায়ী: অর্থমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৮
ব্যাংকের খেলাপি ঋণের জন্য সরকার দায়ী: অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত/ফাইল ছবি

ঢাকা: সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের জন্য সরকার দায়ী মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, সরকারি কাজের জন্য আমরা ব্যাংকগুলোকে চাপাচাপি করি, সোনালী ব্যাংক এদের মধ্যে সবার আগে।

শনিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশে (আইডিইবি) সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  
 
অর্থমন্ত্রী বলেন, সোনালী ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ঋণ বিতরণের আগে ভালোভাবে প্রকল্প বিশ্লেষণ ও গ্রাহকের কেওয়াইসি (নো ইউর কাস্টমার) ফর্ম ভালোভাবে চেক করতে হবে।

খেলাপী ঋণ অত্যন্ত বেশি, যা বেশি হওয়ার জন্য কিছুটা আমরাও দায়ী, সরকার দায়ী। এছাড়া কেওয়াইসি দায়ী। আমরা অনেক সময় আমাদের ছয় ব্যাংকের (রাষ্ট্রায়ত্ত) উপর চাপাচাপি করি।
 
মু‍হিত বলেন, সোনালী ব্যাংক যেহেতু সবচেয়ে বড় ব্যাংক, তাই চাপাচাপিটা সোনালী ব্যাংকের উপর একটু বেশিই হয়। আমরা চাপাচাপি কমানোর চেষ্টা করছি। আপনারা (ব্যাংক কর্মকর্তা) যখন কোনো প্রকল্পকে বিশ্লেষণ করে ঋণ দিতে অনুপযুক্ত মনে করবেন, সেটাতে আমরা জোরাজুরি বন্ধ করার চেষ্টা করব।
 
সোনালী ব্যাংকের উন্নতিতে দু’টি প্রস্তাব দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনাদের জন্য বড় কাজ গ্রাহককে জানা -কেওয়াইসি (নো ইউর কাস্টমার)। আরেকটি হলো ঋণের জন্য আবেদন করা প্রকল্প সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। দু’টি কাজ নজর দিলে ক্ষতিকারক কিছু হবে না। প্রকল্প ভালেভাবে বিশ্লেষণ করলে দু’টি জিনিসের সমাধান হবে- ঋণ বিতরণ সঠিক হবে এবং কেওয়াইসি ঠিক থাকবে।
 
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ২০০৯ সালে বলেছিলাম সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংক। সেই অবস্থানে তারা আর নেই। ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলে গেলেন, সেই অবস্থান তারা পুনরুদ্ধার করবেন। ২০১৯ সালে বড় হওয়ার কথা বলেছিলাম, সেটি হবে না। তবে ‘কাপল অফ ইয়ার’ এর মধ্যে এটি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ব্যাংকটির ১ হাজার ২১১টি শাখার মধ্যে ১৮১টি লোকসানী শাখা। এটি বন্ধ করা যাবে না। লাভজনক করার জন্য জায়গা পরিবর্তন করে দেখা যেতে পারে।
 
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত যথেষ্ঠ দুর্বল। আগের চেয়ে তুলনা করলে সেটি হবে না। ১৯৭১, ৭২, বা ১৯৮১ সালের তুলনায় ব্যাংকিং খাত স্বর্ণযুগে রয়েছে। তবে অবস্থার উন্নতি করতে হবে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, মূলধন ঘাটতি, লোকসানী শাখা, খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। প্রয়োজনে মামলার করা আগে খেলাপি গ্রাহকদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। একক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও এসএমই খাতে ঋণ দিতে হবে। আমদানি-রফতানিতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে‘ফোর্সড লোন’ বন্ধ করতে হবে।
 
ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল বলেন, গত বছর অনেক সূচকে আমরা উন্নতি করেছি। তবে ঐতিহাসিকভাবে প্রাপ্ত মূলধন ঘাটতির দুষ্টচক্রে রয়েছে ব্যাংকটি। ২০০৭ সালে কোম্পানি হিসেবে গঠনের পর ব্যাংকটির ৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রেখে দেওয়া হয়। এ ঘাটতি পূরণে আমরা সরকারকে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এটি বিবেচনা করলে বড় সমস্যা কেটে যাবে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বড় অঙ্কের অর্থায়ন করা হয় কিন্তু কোনো চার্জ নেওয়া হয়না। বিনামূল্যে অনেক সার্ভিস দেওয়া হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ আদায়ের সুযোগ চেয়ে পাঠিয়েছি। এসব অনুমোদন হলে ব্যাংকটির অবস্থা আরও ভালো হবে।  
 
ইউনুসুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাত গত ৯ বছরে অনেক এগিয়েছে। তবে সফলতার পাশাপাশি কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। সোনালী ব্যাংকের প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা অলস তারল্য রয়েছে। এটি ভালো দিক নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের মত আচরণ না করে গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে হবে। বড় অঙ্কের ঋণ দিলে তা আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বিকল্পভাবে ঋণ বিতরণ করতে হবে।
 
অনুষ্ঠানে এমডি জানান, গত বছর ব্যাংকটির আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৪২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। ব্যাংকটির লোকসানী শাখা ২৩৩টি থেকে কমে ১৮১টিতে নেমে এসেছে। বছর শেষে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা, গত বছর যা ছিল ৪২৫ কোটি টাকা।  
 
এছাড়া অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৮
এসই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।