ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্যাংকিং

খেলাপিতে ধুঁকছে ব্যাংকিং সেক্টর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৮
খেলাপিতে ধুঁকছে ব্যাংকিং সেক্টর দু’দিনব্যাপী প্রথম আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলনে/ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: লাগামহীন খেলাপিতে ধুঁকছে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর। পার্শ্ববর্তী সব দেশকে ছাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ। কোনো উদ্যোগ, কোনো ব্যবস্থাই কাজে আসছে না। প্রতিবেশী দেশ নেপালের খেলাপি ঋণ যেখানে শূন্যের কাছাকাছি সেখানে আমাদের খেলাপি ঋণ দুই অঙ্কের ঘরে।

রোববার (০৪ মার্চ) মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী প্রথম আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলনে-২০১৮ (আরবিসি-২০১৮)।

এর প্রথম দিনে ব্যাংকিং খাতের দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের লাগামহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন।



সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। উদ্বোধনী সেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক ( প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব।

গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকদের সেবা দেওয়া, দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু, এর পরেও ব্যাংকিং খাতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এসব নতুন নতুন উদ্যোগগুলো আগামী দিনের ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভালো কৌশল হিসেবে পরিগণিত হবে।

সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বলেন, জনগণের আমানতের অর্থ এভাবে কিছু মানুষের হাতে কুক্ষিগত হওয়ায় পুরো ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি তৈরি করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আগামী দিনে ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। তাই এখনই সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে।

আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নেপাল, ভুটান, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে কম নেপালে এবং সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। নেপালের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ গড়ে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। দেশটির সানিমা নামে একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ মাত্র ০.০৩ শতাংশ। অন্যদিকে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের গড় হার ২৫ শতাংশ। তবে বেসিক ও বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশের উপরে রয়েছে। ভুটানের খেলাপি ঋণও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের খেলাপি ঋণ একটু বেশি হলেও তা এখনো দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছায়নি।

সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশনের সঞ্চালক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, নেপালের খেলাপি ঋণ কম হওয়ার পেছনে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভালো ভূমিকা রাখছে। কারণ, তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনেক শক্তিশালী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। উচ্চ খেলাপি ঋণ সবাইকে ভোগাচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ দেখা যায় না। বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে অবস্থান করছে। তবে খেলাপি ঋণের উচ্চ হার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কারণে।

ঋণ পুনর্গঠনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটা প্রতিষ্ঠান আবার খেলাপি হয়ে পড়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাত রক্ষা করতে হলে সুশাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (বাংলাদেশ ব্যাংক) সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন শিবলী রুবায়েতুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে ভুটানের অবস্থা ভালো। তাদের ঋণ বিতরণে ভারসাম্য রয়েছে। এছাড়া নেপালের ব্যাংকিং খাতও অনুসরণ করার মতো। কারণ, তাদের খেলাপি ঋণ খুবই কম। অনেকটা শূন্যের কাছাকাছি। আর বাংলাদেশের ৬টি সরকারি ব্যাংকের দিকে তাকালে ব্যাংকিং খাত কেমন চলছে তা বোঝা যায়।

সম্মেলনে দেশের ব্যাংকিং খাতে উচ্চ সুদের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন। তাদের মতে, প্রতিবেশী দেশে কম সুদে ঋণ বিতরণ করা হলেও আমাদের দেশে সুদের হার অনেক বেশি। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন

প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য এই আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলনের মূল আয়োজক বিআইবিএম। এ সম্মেলনে সহযোগী সদস্য হচ্ছে- ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (এনআইবিএম), ভুটানের ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস ট্রেনিং ইনস্টিটিটিউট (এফআইটিআই) এবং নেপালের ন্যাশনাল ব্যাংকিং ইনস্টিটিউট (এনবিআই)।

সম্মেলনে তিনটি বিজনেস সেশনে ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকার, গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা এসব সেশনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনে ছয় শতাধিক অশংগ্রহণকারী উপস্থিত থাকবেন।

আরবিসি-২০১৮’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিআইবিএমের দু’টি সার্টিফিকেশন কোর্সের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এই দু’টি কোর্স অনলাইন এবং অফলাইন মডিউলের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। সম্মেলন শেষ হবে সোমবার ৫ মার্চ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
এসই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।