ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

এসবিসি’র পাওনা ৬২৯কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪২ বিমা কোম্পানি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৮
এসবিসি’র পাওনা ৬২৯কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪২ বিমা কোম্পানি সাধারণ বিমা করপোরেশন

ঢাকা: সাধারণ বিমা করপোরেশনের (এসবিসি) পাওনা ৬২৯ কোটি টাকা দিতে গড়িমসি করছে ৪২টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। প্রিমিয়াম ও পুন:বিমার এ পাওনা পেতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে অভিযোগ করেছে এসবিসি। কিন্তু তাতেও কোনো ফল পায়নি সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

ঝুঁকি কমাতে বিমা কোম্পানিগুলোর বিমার ওপর শতভাগ পুন:বিমা করার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ সাধারণ বিমা করপোরেশনে করা বাধ্যতামূলক।

বাকি ৫০ শতাংশ পুন:বিমা কোম্পানি ইচ্ছা করলে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে করতে পারে।

পুন:বিমার এ আইন অনুসারে ৪২টি বিমা কোম্পানির কাছে ৬২৯ কোটি ৩৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬২৪ টাকা পাবে এসবিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিমা কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে টাকা পরিশোধ করছে না। এতে এসবিসি'র পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিমাখাতও। বিমা কোম্পানির প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন গ্রাহকরা।

বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সদিচ্ছা না থাকার পাশাপাশি নগদ অর্থ সংকটের কারণে এসবিসি'র টাকা পরিশোধ করতে পারেনি বেশিরভাগ কোম্পানি। কারণ, নিয়ম অনুসারে বিমা কোম্পানিগুলো এজেন্টদের ১৫ শতাংশ কমিশন দিতে পারে। কিন্তু তারা সে নিয়ম ভঙ্গ করে এজেন্টদের ৬০-৭০ শতাংশ হারে কমিশন দিচ্ছে।

ফলে কমিশনের টাকা দেওয়ার পর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়, অফিস খরচ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন এবং বাসা ভাড়া দিয়ে তাদের হাতে কেনো টাকা থাকে না। এ অনৈতিক প্রতিযোগিতায় কোম্পানিগুলো নগদ অর্থ সংকটে পড়েছে।

সাধারণ বিমা করপোরেশনের সাবেক এমডিসহ একটি চক্রের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কারণে সরকার দীর্ঘদিন ধরে এ টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এসবিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বাংলানিউজকে বলেন, এসবিসিতে পুন:বিমা করানো লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। ফলে বিমা খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাষ্ট্র সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
 
তিনি বলেন, এসবিসি’র পাওনা টাকা দ্রুত আদায়ের লক্ষ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। গত বছর পুন:বিমা নবায়ন চুক্তির সময় তাদের প্রতিজ্ঞা করানো হয়েছে। তারা বলেছিলো, তখন থেকে তারা কোনো বকেয়া রাখবেন না। পুরনো টাকাগুলো প্রতি কোয়ার্টারে পরিশোধ করবেন। কিন্তু বেশির ভাগ কোম্পানি তাদের ওয়াদা পূরণ করেনি। তবে আশা করছি বিমা কোম্পানিগুলো এই টাকাগুলো দিয়ে দিবে।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত তথ্য অনুসারে, এসবিসি’র সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৮৫ কোটি ৯৮ লাখ ৭২ হাজার ৮৫৮ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৬৮ কোটি ৮০ লাখ ০২ হাজার ৮২৪ টাকা, তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ৩৬ কোটি ৯০ লাখ ৫ হাজার ৭৫৯ টাকা, চতুর্থ স্থানে থাকা কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩৬ কোটি ৬৮ হাজার ৫৫ হাজার ৯৪৪ টাকা এবং পঞ্চম স্থানে থাকা ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৯০৪ টাকা পাওনা রয়েছে।  

এছাড়া জনতার কাছে ২৭ কোটি ৯৮ লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ টাকা, মেঘনার কাছে ২৫ কোটি ৬২ লাখ ১১ হাজার ৪২৭ টাকা, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২৫ কোটি ৮৭ লাখ ১৭ হাজার ৯২৪ টাকা, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২১ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৪৩২ টাকা, এশিয়া প্যাসিফিকের কাছে ১৯ কোটি ১৩ লাখ ১৬ হাজার ৬৪৬ টাকা, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের ১৯ কোটি ১০ লাখ ৫২ হাজার ৬৫ টাকা, ইসলামী কমার্শিয়ালের কাছে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ১১ টাকা, এশিয়ার কাছে ১৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার ৫০৩ টাকা, সোনার বাংলার কাছে ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ১৮১ টাকা, রিপাবলিকের কাছে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩৯ টাকা, ইস্ট ল্যান্ডের কাছে ১২ কোটি ৬৯ লাখ ১১ হাজার ৮২৭ টাকা, মার্কেন্টাইলের কাছে ১২ কোটি ২৬ লাখ ৬৪ হাজার ৩৭১ টাকা, সিটি’র কাছে ১১ কোটি ২৮ লাখ ৬৯ হাজার ২২১ টাকা, প্রভাতীর কাছে ১১ কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৪ টাকা, দেশ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৫৫২ টাকা ও রিলায়েন্সের কাছে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৯৫৪ টাকা পাবে এসবিসি।

১০ কোটি টাকার নিচে পাওনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৮‘শ টাকা, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ৯ কোটি ৬০ লাখ ৮৫ হাজার ১৮ টাকা, বিডি করপোরেশন কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ২৫৮ টাকা, বিডি ন্যাশনালের কাছে ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৬৩ হাজার ৯৪৩ টাকা, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৫ কোটি ৫৪ লাখ ১৪ হাজার ৪৯৭ টাকা, ক্রিস্টালের কাছে ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৬ হাজার ৬৫৫ টাকা, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৪ কোটি ৪১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬ টাকা, ইস্টার্নের কাছে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭৭ টাকা, এক্সপ্রেসের কাছে ৮ কোটি ৬৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৫ টাকা, ফেডারেলের কাছে ৪ কোটি ২৪ লাখ ৩৪ হাজার ২৩০ টাকা, গ্লোবালের কাছে ৯ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার ১৮৬ টাকা, কর্ণফুলীর কাছে ১ কোটি ৬৬ লাখ ১২ হাজার ৩৫৪ টাকা, নিটলের কাছে ৪ কোটি ৪৩ লাখ ১ হাজার ৬২৪ টাকা, নর্দানের কাছে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৭২ হাজার ২৩ টাকা, প্যারামাউন্টের কাছে ২ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার ১১৫ টাকা, ফনিক্সের কাছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৪৭ টাকা,  প্রাইমের কাছে ৬ কোটি ৯২ লাখ ৪২ হাজার ৩২২ টাকা, তাকাফুলের কাছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৬২টাকা, ইউনাইটেডর কাছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬২ টাকা, ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৮ টাকা স্ট্যান্ডার্ডের কাছে ৮ লাখ ৬৯৩ টাকা ও সাউথ এশিয়ার কাছে ২ কোটি ৬ লাখ ৯২ হাজার ২১৪ টাকা, সিকদার ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭০ টাকা, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৮৭ লাখ ৭৩ হাজর ৩৯৩ টাকা, পূরবী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১ কোটি ৬২ লাখ ৩৩ হাজার ৭১২ টাকা এবং সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৫ টাকা পাওনা রয়েছে এসবিসি'র।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৮
এমএফআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।