রফিকুল ইসলাম নতুন বাজার থেকে ২৫ টাকা ভাড়ায় রিকশায় চড়ে ছোলমাইদ এসেছেন। রিকশা থেকে নেমে চালককে ৩০ টাকা দেওয়ার পর রিকশাচালক তাকে ফেরত দিয়েছেন দুটি দুই টাকার নোট মানে ৪ টাকা।
শুধু শাফায়াত হোসেন ও রফিকুল ইসলাম নন, সবার সঙ্গে কমবেশি মুদি দোকানদার, রিকশাচালক, বাসচালকরা ১ টাকার বিকল্প চকলেট অথবা না থাকার অজুহাত দেখিয়ে দায় সারছেন।
১ টাকার নোট নিয়ে জটিলতার ব্যাপারটি নিয়ে ভাটারা বাজারের দোকানদার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ক্রেতাদের কাছ থেকে ১ টাকার কয়েন আমরা নিলেও ব্যাংক কয়েন জমা নিতে চায় না। এজন্য আমরা ১ টাকার কয়েন নেই না। ব্যাংক আমাদের কাছ থেকে কয়েন নিলে আমাদের নিতে তো কোনো সমস্যা নাই।
আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, অনেক ক্রেতাও আছে যারা ১-২ টাকার কয়েন দিলে নিতে চায় না। বলে, নোট নাই, নোট দেন। আমরা দুই ধরনের সমস্যাতেই আছি।
ওই এলাকার সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় গিয়ে ১ টাকার এক হাজার কয়েন জমা দিতে চাইলে আগ্রহ দেখাননি দায়িত্বরত ক্যাশিয়ার। রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখাও ১ টাকার কয়েন জমা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার জানান তাদের ভল্টে বিপুল পরিমাণ ১ টাকার কয়েন জমা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যসব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলোর ভল্টে বিপুল পরিমাণ ১ টাকার কয়েন জমা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো ১ টাকার কয়েন আনে না। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও গ্রাহককে চাহিদামতো ১ টাকার কয়েন সরবরাহ করে না।
১ ও ৫ টাকার কয়েন জমা নেওয়া ও গ্রাহককে দেওয়ার বিষয়ে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ধাতব মুদ্রা বা কয়েন বিনিময় না করলেও ব্যাংকগুলোকে জরিমানা করা হবে বলে হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। তারপরও ব্যাংকগুলো গ্রাহকের সঙ্গে ১ টাকার কয়েন লেনদেন করছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব মতে দুইশ কোটি টাকার বেশি ১ টাকার কয়েন ও প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতো ১ টাকার নোট বাজারে রয়েছে। কয়েনের চেয়ে নোট ছাপানোর খরচ বেশি হওয়ায় কয়েনের দিকেই নজর সরকারের। আবার নোট অনেক দিন ব্যবহারের ফলে ছিঁড়ে যায়, যেটা কয়েনের ক্ষেত্রে হয় না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ধাতব মুদ্রার প্রচলন বাড়াতে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। রাজধানীর বাইরেও প্রচার চালাতে হবে। তাহলে বাড়বে এই মুদ্যার ব্যবহার।
এদিকে বিভিন্ন সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ৫ টাকার নিচে সব মুদ্রা তুলে দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রীর সেই বক্তব্যের পর থেকে সাধারণ মানুষ, রিকশাচালক, লোকাল বাসের সুপারভাইজার ও দোকানদাদের মধ্যে একটি আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে কোন সময় ট্রেজারি নোট ও ধাতব মুদ্রা অচল হয়ে যেত পারে বলে মানুষের আশঙ্কা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। কোনো গ্রাহক অভিযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৮
এসই/এমজেএফ