বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে ন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন স্ট্রাটেজি অব বাংলাদেশ কর্মশালায় এসব মতামত জানানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এই কর্মশালার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য কম সুদে ঋণ বিতরণ করতে হবে। গ্রামের মানুষকে এখনও মাইক্রো ফাইন্যান্স ইন্সটিটিউট থেকে ২৫-২৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে। এটি কমাতে হবে। ব্যাংকের শাখা বাড়ানোর বদলে অন্যভাবে এই সেবা প্রদানের বিষয়ে ভাবতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সূচকগুলোতে কোথায় আছি, কোথায় যাবো তার একটি হিসাবও থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক জুলহাস উদ্দিন বলেন, আমাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সংজ্ঞাটা ঠিক করতে হবে। আমরা বলছি আমাদের ৮৫ মিলিয়ন ব্যাংক হিসাব আছে। এর মানে এই না যে, আমাদের ৮৫ মিলিয়ন মানুষের ব্যাংক হিসাব আছে। এসব ব্যাংক হিসাবের মধ্যে একজনের ১০টি হিসাবও থাকতে পারে। এজন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সংজ্ঞা থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি দেখেছি রাজশাহীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির তথ্য আর সিলেটের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির তথ্য এক নয়। কোন এলাকায় কি অ্যাপ্রোচ নেবো সেই অ্যাপ্রোচটা ঠিক করতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সেবা বাড়ানোর জন্য আমাদের বিশেষ কিছু পরিকল্পনা নিতে হবে। যেমন, স্কুল ব্যাংকিংয়ের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। এজন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চার্জমুক্ত সার্ভিস চালু করতে হবে।
শিওর ক্যাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদৎ খান বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কৌশলের কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। এতে আমরা কখন কোন জিনিসটি বাস্তবায়ন করতে চাই তা স্পষ্ট হবে।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য কোথাও না গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করতে ই-কেওয়াইসি চালু করতে হবে। ন্যাশনাল পেমেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি ইমেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে সব ধরনের পেমেন্টের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কম ডেটা দিয়ে বেশি ডেটার সার্ভিস দেওয়ার চিন্তাও করতে হবে।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশে যারা মাইক্রোক্রেডিট করছে, তাদের একেক জনের সার্ভিস চার্জরেট একেক রকম। সবার জন্য এক সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নের জন্য কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান, অমলেন্দু মুখার্জি বলেন, জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশলে বলা হয়েছে, এমএফআই, এমআরএ সম্পর্কে কিছু বাধার কথা বলা হয়েছে। এমএফআই খাতকে পুওর না বলে অন্য নাম করা যেতে পারে। এক হাজারটি এমএফআইর সঙ্গে এমআরএ অটোমেটিক ভাবে যুক্ত।
তিনি আরও বলেন, এমএফআইর কর্মকর্তারা বলছেন, এমআরএ’র কোনো গ্রাহক নিরাপত্তা নাই। টাকা রাখতে হয় ব্যাংকে। এটা ঠিক এমআরএ’র নিজস্ব কোনো ভল্ট নাই। মাইক্রো ফাইন্যান্সে লেনদেন চার্জ অনেক বেশি। কারণ প্রত্যেক এমআরএ কর্মীকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা তুলতে হয়। আর ব্যাংকে মানুষ গিয়ে টাকা নেয় এবং জমা দেয়।
বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, এমএফআই কিভাবে এমএফএস সুবিধা নিতে পারে। মাইক্রো ফাইন্যান্স ইন্সটিটিউটগুলোর জন্য কম খরচে ঋণ দেওয়া এবং আদায় করার ভালো প্লাটফর্ম হচ্ছে বিকাশ। অনেক সময় এমএফএস এর খরচ নিয়ে কথা হয়। এজেন্টের কাছ ১ হাজার টাকা ক্যাশআউট করলে ১৮ টাকা খরচ হয়। এই খরচের ৭৭ শতাংশ পায় এজেন্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটর। ৭ শতাংশ যাচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্কের অপারেটরের কাছে, ১৬শতাংশ পাচ্ছে এমএফএস প্রতিষ্ঠান। তবে এমএফআইর ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই চার্জ কিন্তু থাকছে না।
কর্মশালার প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সম্মানীয় অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, ডিএফআইডি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস জেইন এডমন্ডসন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিত চৌধুরী, জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন প্রতিবেদনের লিড কনসালটেন্ট মুস্তফা কে মুজেরি। কৌশলপত্রের বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক আসিফ ইকবাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৮
এসই/এনএইচটি