ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য বিদ্যমান থাকার পরও সর্বশেষ লাইসেন্স পাওয়া ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে ঋণ বিতরণ করছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন শেষে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে সর্বশেষ লাইসেন্স পাওয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক গড়ে ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছে। যা চলতি বছরের আগস্ট থেকে। অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় এই সুদহার অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে গুরুতর নগদ সংকটের অবসান ঘটানোর পর ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত তরলতা আরও বাড়ে।
সাধারণত ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনের চেয়ে যে পরিমাণ তারল্য অতিরিক্ত থাকে ওইটাকেই অতিরিক্ত তারল্য বলা হয়।
নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) ১ শতাংশ কমানোর ফলে এক বছরের তুলনায় ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ২৭ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৯৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে তারল্যের পরিমাণ ছিল ৭৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাংক মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিআরআর ১ শতাংশ কমানোর পর ব্যাংকিং খাতে এই তারল্য বেড়েছে। আগে সিআরআর ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল।
প্রতিবেদনটি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তারল্য সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক সিআরআর কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করেছে। যার ফলে এই পরিমাণ তারল্য বেড়েছে ব্যাংকিং খাতে।
এদিকে, অতিরিক্ত তারল্য প্রবাহের ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে সুদের হার গড়ে এক থেকে দুই শতাংশ কমিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১০ থেকে ১১ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করছে। কিছুদিন আগেও ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদের হার ছিল গড়ে ১৩ শতাংশেরও বেশি।
ঋণের সুদের হার এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকের পরিচালকরা নগদ জমা সংরক্ষণ হার এক শতাংশ কমিয়ে এখন ১০ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করছেন।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক এক অংকের ঘরে শিল্প ঋণ বিতরণ করলেও ১৩ শতাংশ সুদে কনজ্যুমার ঋণ বিতরণ করছে। সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা শিল্প ঋণের সুদ এক অংকের গড়ে নামিয়ে এনেছি। অন্যান্য ঋণের সুদহার সমন্বয় করার জন্য সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডেল্টা ব্র্যাক হাউসিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিউএম শরীফুল আলা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাড়ি ক্রয়, নির্মাণ ঋণ ৯ থেকে ১০ শতাংশ সুদে বিতরণ করছি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও এসব ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশ ছিল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারল্য সংকট কেটে যাওয়ার পর ঋণের সুদের হার ১ থেকে ২ শতাংশ কমিয়ে এনেছে বলে জানান শরীফুল আলা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন শেষে মোট তারল্যের ৫৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কাছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের কাছে তারল্য ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তারল্য বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে রয়েছে ৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট তারল্যের ৩২ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে তারল্য ছিল ২১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকে তারল্য বেড়েছে ৪৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংক মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিআরআর হার ১ শতাংশ কমানো হয়েছে ঋণের সুদহার কমানোর জন্য। আর এটা কমানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনিটরিং করছে। যারা এখনও কমায়নি, তাদের কমাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৮
এসই/টিএ