রোববার (২৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে বিআইবিএম আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারের বিষয় ছিলো ‘সেন্ট্রালাইজড অ্যান্ড ডিসেন্ট্রালাইজড ব্যাংকিং: এ স্টাডি অব দ্য রিস্ক-রিটার্ন প্রোফাইল অব ব্যাংকস অ্যান্ড গর্ভনমেন্ট স্পেন্ডিং অ্যান্ড সোসিও-ইকোনোমিক ডেভলপমেন্ট ইন নামিবিয়া’।
সুর চৌধুরী বলেন, সেন্ট্রালাইজড এবং ডিসেন্ট্রালাইজড উভয় পদ্ধতির একটি যোগসূত্র রয়েছে। বাংলাদেশে যেটি ব্যবহৃত হয়, সেটি হলো, বড় ধরনের ঋণ, সম্পদ দায়বদ্ধতা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সেন্ট্রালাইজড (হেড অফিস) হয়। কিন্তু কিছু কিছু সেবার মান উন্নয়নে ডিসেন্ট্রলাইজেশনেরও (বিকেন্দ্রীয়করণ) প্রয়োজন রয়েছে। এতে নতুন নতুন উদ্ভাবন তৈরি হবে, কর্মকর্তাদের মেধার বিকাশ ঘটবে, শাখা পর্যায়ে নিজেরা ক্ষমতাবান হবে। এছাড়াও এসএমই, কৃষি, নারীর ঋণ, নারীর ক্ষমতায়ন, এমএসএমই, সিএসএমই ঋণ বিতরণের ক্ষমতা দেওয়ার কারণে গ্রামের মানুষ ঋণ পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের সুষ্ঠু সমন্বয় গড়ে তোলা গেলে আমাদের শাব্দিক এবং পদ্ধতিগত ব্যাংকিংয়ের সুবিধা পাওয়া যাবে। ইদানিং যে সমস্যা দেখা যাচ্ছে, সেটা হলো শাখার মাধ্যমে সেবা প্রদানের কোনো রেকর্ড শাখায় থাকছে না। যখন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো অডিট কোম্পানি অন ইন্সপেকশনে যায়, তখন বলা হয়, আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। সব তথ্য হেড অফিসে।
সুর চৌধুরী বলেন, ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক পরিদর্শন হেড অফিসের মাধ্যমে হতে, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে শাখা পরিদর্শন ছাড়া সম্ভব না। তাই সবকিছু একেবারে সেন্ট্রালাইজড করা হলে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। আবার সবকিছু ডিসেন্ট্রালাইজড করা হলেও কিছু রিস্ক থেকে যায়। কোথাও রিস্ক কম, কোথাও রিস্ক বেশি। রিস্ক যদি বেশি হয়, তাহলে আয় সাময়িকভাবে বেশি হলেও টেকসই হয় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরামর্শক বলেন, আমাদের পরামর্শ হচ্ছে সেন্ট্রালাইজড এবং ডিসেন্ট্রালাইজড দু’টোই চালু থাকবে। এতে বড় ঋণগুলো হেড অফিসের সিদ্ধান্তে বিতরণ করতে হবে আবার ছোট ঋণগুলো শাখা ম্যানেজারই দিতে পারবে। তবে মনে রাখতে হবে সততা, স্বচ্ছতা, হিসাবায়ন ও পরিদর্শনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই যেন ডাটা ট্রান্সফরমেশনের কোনো জায়গায় বাংলাদেশ ব্যাংক যেন অসুবিধার সম্মুখীন না হয়।
তিনি আরও বাংলাদেশে আশির দশকে সেন্ট্রালাইজড ব্যাংকিং ছিল। পরবর্তীতে দেখা গেলো সেন্ট্রালাইজড ব্যাংকিংয়ে সেবাটা খুব বিস্তৃত করা যাচ্ছে না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ডিসেন্ট্রালাইজড ব্যাংকিং শুরু করা হলো। তার ফলে রিজিওনাল অফিস, জোনাল অফিস ও শাখা ব্যবস্থাপকের ক্ষমতা দেওয়া হলো।
ডিসেন্ট্রালাইজড করার পরও রিজিওনাল, জোনাল ও শাখা ব্যবস্থাপক কিছু সিদ্ধান্ত প্রধার কার্যালয়ে নিয়ে এলো। এক পর্যায়ে সেন্ট্রালাইজড ব্যাংকিং ব্যবস্থাই আবার শুরু হলো। এজন্য ব্যাংকাররা বিভন্ন ধরনের যুক্তিও তুলে ধরেন। যেমন সব ধরনের ডাটা কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা, এখান থেকে সিদ্ধান্ত হয়ে শাখায় যাবে। এ ব্যাপারে সেবা পেতেও অসুবিধা নেই।
কিন্তু সেন্ট্রলাইজড বা ডিসেন্ট্রালাইজড ব্যাংকিং প্রকৃতপক্ষে কোনোটাকেই খারাপ বলার সুযোগ নেই। সেন্ট্রালাইজড ব্যাংকিংয়ের কিছু যথাযথতা আছে, যেমন অল্প জনবল দিয়ে কম খরচে কাজ চালানো যায়। ঝুঁকি কম হয়, ভালো কাজ পাওয়া যায়।
আবার ডিসেন্ট্রালাইজড ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এতে ব্যবসা প্রসারিত হয়, ব্যবসার প্রসারে ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পায়। এখানে একটি সমস্যা আছে গ্রাহককে সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে না পারলে ঝুঁকিটা বেড়ে যায়। বড় ঋণ খেলাপি হতে পারে। এতে কর্মকর্তাদের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
এসই/জেডএস