ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

অবহেলিত গ্রামীণ নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে ‌‘নারী’

ফজলে ইলাহী স্বপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
অবহেলিত গ্রামীণ নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে ‌‘নারী’ দৃষ্টিনন্দন পাটের পণ্য। ছবি: বাংলানিউজ

কুড়িগ্রাম: গ্রামীণ প্রত্যন্ত এলাকার বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্তা ও হতদরিদ্র কর্মহীন নারীদের মাধ্যমে পাটের আঁশ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদন করে স্বাবলম্বী করে তুলছে ‘নারী’। গ্রামীণ অবহেলিত নারীদের সৃজনশীল হাতের ছোঁয়ায় পাটের আঁশ থেকে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন শতরঞ্জি, কিচেন ম্যাট, ঝুড়ি, নানা ধরনের ব্যাগ, হাতপাখা, পাপোস, বালিশ কুশন, টেবিল ম্যাট, কার্পেট, সিকা, শো-পিস, গহনাসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ।

অবহেলিত সোনালী আঁশ পাটকে প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ৭শ কর্মহীন নারীর কারুকাজ খচিত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে দেশ-বিদেশে। এসব কর্মহীন নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে ২০১৪ সালে নারী (নারী অ্যাসোসিয়েট ফর রিভাইভার ইনিসিয়েটিভ) নামে একটি সংগঠন উলিপুর-চিলমারী সড়কের রামদাস ধণিরাম পাড়ায় নারীদের নিয়ে কর্মযজ্ঞ শুরু করে।

এসব নারীদের সহযোগিতায় দৃষ্টিনন্দন পাটজাত পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রুচিশীল মানুষের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয় সংগঠনটি। হতদরিদ্র নারীদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলতে আলোর দিশা দেখিয়েছেন নারী সংগঠক ফরিদা ইয়াসমিন। পাটের পণ্যসামগ্রী বানাচ্ছেন নারীরা।  ছবি: বাংলানিউজনারীর (নারী অ্যাসোসিয়েট ফর রিভাইভার ইনিসিয়েটিভ) সংগঠক ফরিদা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, শুরুতে তিনশটি তাঁত কিনে কর্মযজ্ঞ শুরু করেন ছোট্ট কারখানায়। উৎপাদিত পণ্য জনসম্মুখে ডিসপ্লে করতে শো-রুম খোলার পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পমেলায় অংশগ্রহণ নিয়ে বায়ারদের মাধ্যমে বাজারজাতের চেষ্টা করেন।

উদ্যোক্তা আরও বলেন, ধীরে ধীরে আশপাশের বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্তা ও হতদরিদ্র নারীদের সংগঠিত করে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টা করেন। এভাবেই নারী উদ্যোক্তারা অনেক কষ্ট করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সরকারের বিভিন্ন ব্যাংকগুলো নারী হওয়ার কারণে ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঋণ না পেয়ে অবশেষে শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে সামনে এগুতে হচ্ছে।

নারী সংগঠনে কার্মরত শেফালী (৪০) শাহিনা (৩৫), সেলিনা (৩৮) সহ আরো অনেকে বাংলানিউজকে বলেন, কর্মহীন ও অবহেলার শিকার হয়ে পরিবারে আমাদের তেমন কোনো মূল্যই ছিলো না। এখানে কাজ করে সমাজে যেমন সম্মান বেড়েছে, তেমনি প্রতিমাসে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে পরিবারকে সহযোগিতা করছি। .কর্মরত নারীরা আরও বলেন, আগে খুব কষ্টে দিন কাটালেও কাজ পেয়ে সংসারে শান্তি এসেছে। ছেলে-মেয়েকে পড়াতে পারছি। নিজস্ব থাকার ঘর তৈরি করতে পেরেছি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি রওশন আরা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সরকার তৃণমূল পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করছে। আরো অধিক সংখ্যক নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে। নারীরাও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পরিবারে সহযোগিতা করছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পের মাধ্যমে তারা অগ্রসর হচ্ছে। সরকারও নানাভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৩ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
এফইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।