ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যাংকিং

করোনা: ময়লা টাকা নিয়ে ভাবছেই না বাংলাদেশ ব্যাংক

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২০
করোনা: ময়লা টাকা নিয়ে ভাবছেই না বাংলাদেশ ব্যাংক

ঢাকা: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বের কয়েকটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোংরা ও ময়লা নোট পৃথক করার ব্যবস্থা নিলেও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নোট পৃথক করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৬ মার্চ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য ব্যাংক নোট পৃথক করা শুরু করেছে। এমনকি এই প্রতিরোধের অংশ হিসেবে নোংরা ও ময়লা নোট পুড়িয়ে ফেলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চীনের হুবেই প্রদেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি। মারা গেছেন প্রায় চার হাজার ২০০ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকও নোট থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও নগদ টাকার ওপর নির্ভরতার কারণে ব্যাংক নোটের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তবুও বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক এক লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৫ দশমিক ৫২ কোটি টাকার নোট বাজারে ছেড়েছে। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি।

একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় নিউইর্য়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন গবেষক নিউইর্য়ক শহরে প্রচলিত ময়লা নোটে জীবানু পাওয়ার বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন ২০১৭ সালে।

তারা নগদ টাকায় যে জীবানু খুঁজে পেয়েছিলেন, তা ভাইরাসের মতো মানুষের মুখ থেকে শুরু করে শরীরের নানা অঙ্গে বাস করে। টাকা বিনিময়ের সময় এসব ভাইরাস একজনের কাছ থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলা এবং নগদ টাকার লেনদেন- বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক নোট ব্যবস্থাপনা বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা হয়। ব্যাংক নোটের মাধ্যমে নিউমোনিয়ার মতো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে- এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণাই নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নোংরা এবং ব্যবহারের অনুপযোগী নোট সংগ্রহ ও ধ্বংস করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এটি আমাদের চলমান প্রক্রিয়া। তবে নোট পৃথক করার মতো কোনো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।

এদিকে, চলতি বছরের ২ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে নগদ টাকার ব্যবহারের বিকল্প লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছে।

জাতিসংঘের এই সংস্থা বলেছে, নগদ টাকা স্পর্শ করার পরে তাদের হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। কারণ নোটের মধ্যে এই কোভিড-১৯ ভাইরাসের জীবানু থাকতে পারে। কিন্ত বাংলাদেশে বর্তমানে নগদ অর্থহীন লেনদেনের সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশে ডিজিটাল ও নগদ লেনদেন নিয়ে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা বেটার দ্যান ক্যাশ এলায়েন্সের গবেষণায় বল‍া হয়েছে, বাংলাদেশের মোট লেনদেনের মাত্র ছয় শতাংশ হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে।

উন্নয়নশীল দেশগুলো নগদ টাকার লেনদেন কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেনে অনেক অগ্রগতি করেছে। এখন তাদের ব্যাংক নোট আলাদা করাও অনেক সহজ হয়ে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বাংলাদেশে এই কাজ করা অত্যন্ত কঠিন।

তিনি আরও বলেন, নগদ টাকার লেনদনে কমিয়ে আনতে যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক উদ্যোগ নিয়েছে, তারপরও অনেক পথ বাকি রয়েছে।

বেটার দ্যান ক্যাশ এলায়েন্সের গবেষণায় সংশ্লিষ্ট পিআই স্ট্রাটেজির ম্যানেজিং পার্টনার পিয়াল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৯ সালে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে লেনদেন মূল্য ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে লেনদেন সংখ্যা খুব বাড়েনি।

করোনা ভাইরাসের মতো ভয়াবহ ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের নগদ টাকার লেনদেন কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে মোবাইলে আর্থিক সেবা দেওয়ার মতো নগদ টাকাবিহীন লেনদেন দ্রুত বাড়তে পারে।

পিআই স্ট্রাটেজির অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে ছয় শতাংশ লেনদেন হয়েছে কেনাকাটায়, ৭ শতাংশ ইউলিটি বিল পরিশোধ ও ৫ শতাংশ বেতন দেওয়ায়।

পিয়াল ইসলাম বলেন, এতে বোঝা যায়, ৮০ শতাংশের বেশি লেনদেন হয়েছে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির কাছে। এসময় নগদ টাকার পরিবর্তে লেনদেনের জন্য কার্ড ব্যবহারে ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি উ‍ৎসাহ দেওয়ার আহবান জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলো মোট এক কোটি ৮২ লাখ ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ইস্যু করেছে।

মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের মতো সংক্রমক প্রতিরোধে নগদ টাকার লেনদেন কমিয়ে একটি ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। করোনা ভাইরাস এখনও আমাদের এখানে নিয়ন্ত্রণে আছে। এটি মহামারি আকার ধারণ করার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২০
এসই/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।