ঢাকা: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য ‘সিরিয়াসলি’ কাজ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বড় দুই জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য’র আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
কিন্তু বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততা এবং কিছু রাজনৈতিক হিসাব মেলাতে গিয়ে ২০ ও ১৪ দলীয় জোটের বাইরে থাকা বড় দলগুলোর শীর্ষ নেতারা এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে ‘হ্যাঁ’ বলেন নি। আবার সরাসরি ফিরিয়েও দেন নি।
সূত্রমতে, খালেদা জিয়া সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকে ফোন দিয়ে কথা বলেছেন। আমন্ত্রণ জানিয়েছেন চা-চক্রের। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও পাঠিয়েছেন কয়েকজনের বাসায় জাতীয় ঐক্য’র ব্যাপারে কথা বলার জন্য।
প্রত্যেকেই খালেদা জিয়ার এই উদ্যোগককে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সময়োচিত এই উদ্যোগের সাথে থাকার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি না দিলেও খালেদা জিয়াকে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, সোমবার (০১ আগস্ট) কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমকে ফোন দেন খালেদা জিয়া। পরস্পর কুশলাদি জিজ্ঞাসার এক পর্যায়ে তাকে চায়ের দাওয়াত দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে আব্দুল কাদের সিদ্দিকীকে ফোন দিলে তার একান্ত সচিব হাবিবুন নবী সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার (০১ আগস্ট) খালেদা জিয়া ফোন দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কথা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (০২ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জান্নাতে যেতেও আমি রাজি না। খালেদা জিয়া আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। আমি যাব। ২০ দলীয় জোটের নেত্রী হিসেবে নয়-বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানে স্ত্রী হিসেবে উনার সঙ্গে আমার কথা হবে। ’
সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্য’র আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানাতে সম্প্রতি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
খালেদা জিয়ার বার্তা নিয়ে বাসায় যাওয়া বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন আ স ম আব্দুর রব। সময়োচিত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তাদের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে সাধুবাদ জানান তিনি।
কিন্তু খালেদা জিয়ার সঙ্গে জাতীয় ঐক্য গড়ার ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গিকার করেন নি জেএসডি সভাপতি। বরং ২০ ও ১৪ দলের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে ‘তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি’ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন বিএনপি নেতাদের কাছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আ স ম আব্দুর রব বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়ার ব্যাপারে সিরিয়াসলি কাজ করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা যেহেতু আলাদা একটি রাজনৈতিক জোট গড়ার চেষ্টা করছি, তাই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত তাদেরকে জানাতে পারিনি। আমাদের জোট হয়ে গেলে সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেব খালেদা জিয়ার সঙ্গে জাতীয় ঐক্য করব, নাকি নিজেদের মত কাজ করব।
এদিকে সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ার ঘোষণা দিয়ে বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করলেও বামদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করেন নি বিএনপি চেয়ারপারসন। তার পক্ষ থেকে দলের কোনো নেতাকেও পাঠানো হয়নি বাম নেতাদের কাছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় ঐক্য’র ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ্য থেকে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেন নি। আর বিএনপির সঙ্গে ঐক্য’র ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনটিই আছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষে আমরা সবার সঙ্গে পর্যায়ক্রমে কথা বলছি। এখনো যাদের সঙ্গে বলা হয়নি, খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে কথা বলব।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৬
এজেড/জেডএম