সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট, প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিদ্ধহস্ত বেশিরভাগ নেতাই এখন বিএনপিতে অপাঙ্কতেয়। আর দল বিক্রি করে আখের গোছানোয় অভ্যস্ত তৃতীয় সারির নেতারা এখন বিএনপির কাণ্ডারি-এ মূল্যায়ন মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের!
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আছেন এমন প্রবীণ নেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।
অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারি দলের প্রথম চিফ হুইপ, একাধিকবার একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই উপ-প্রধানমন্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে সঙ্কটকাল অতিক্রম করতে পারত বিএনপি-রাজনৈতিক মহলে এ বিশ্লেষণ দীর্ঘ দিনের।
গত বছর অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের আগে জোর গুঞ্জন ওঠে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাচ্ছেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. আর এ গণির মৃত্যু এবং আরেক প্রবীণ সদস্য এম শামসুল ইসলাম’র স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় এ গুঞ্জন বাস্তবে রূপ নেওয়া ছিলো সময়ের ব্যাপার।
কিন্তু কাউন্সিলের পর দুই পদ খালি রেখে ১৯ সদস্য’র যে স্থায়ী কমিটির নাম ঘোষণা করা হয় সেখানে ঠাঁই হয়নি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের। এখন সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে প্রোটোকল মেইনটেইন করতে গিয়ে স্থায়ী কমিটির অনেক জুনিয়র সদস্য’র পেছনে বসতে হয় তাকে। এ কারণে বৈঠকে যাওয়াই বাদ দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে যে ক’জন ‘লিজেন্ড’ আছেন তাদের মধ্যে এম তরিকুল ইসলাম অন্যতম। রাজনীতির এই প্রবাদ পুরুষ বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডে একেবারেই নিষ্ক্রিয়।
ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত এম তরিকুল ইসলাম এখনো চান দলকে সার্ভিস দিতে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘অস্বাভাবিক’ অফিস শিডিউল’র সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেন না তিনি।
দিন শেষে যখন বিশ্রামের সময় হয় ঠিক তখন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, বিদেশি মেহমানদের সঙ্গে বৈঠক ও দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ডাক পড়ে সিনিয়র নেতাদের। ওই ডাকে সাড়া দেওয়া এম তরিকুল ইসলামের মতো প্রবীণ নেতাদের পক্ষে অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।
বয়জ্যেষ্ঠতা ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এমকে আনোয়ার দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতেন। সাবেক এই ডাকসাইটে আমলার কাছ থেকে এডমিনিসট্রেটিভ সাপোর্ট, যৌক্তিক বিচার-বিশ্লেষণ ও পরামর্শ নিতে পারত বিএনপি।
কিন্তু বার্ধক্যজনিত নানা রোগ-ব্যধির কারণে তিনিও এখন বিএনপিতে নিষ্ক্রিয়। তারপরও যেটুকু সময় তিনি দলকে দিতে পারতেন বা দেওয়ার সুযোগ তার ছিলো সেটা নিতে পারছে না বিএনপি। এসব প্রবীণ নেতার শারীরিক অসুস্থতা ও সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে দিনের কাজ দিনেই করতে পারতেন খালেদা জিয়া। বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ এসব নেতাকে রাতের বেলায় অফিসে ডেকে বিব্রত করতেন না তিনি- সংশ্লিষ্টদের ধারণা এমনটিই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর দুই সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও দলকে খুব একটা সার্ভিস দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এ দুই প্রবীণ রাজনীতিক মাঝে-মধ্যে ছোট-খাটো প্রোগ্রামে কথা-বার্তা বললেও গুলশান অফিসে নিয়মিত আসছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, খালেদা জিয়াকে ঘিরে রাখা কয়েকজন জুনিয়র নেতা ও প্রভাবশালী কর্মচারীর আচরণে যারপরনাই ক্ষুব্ধ মোশাররফ-মওদুদ! তাই নিজেদের মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে বিএনপি থেকে দূরে দূরে থাকছেন। আর রাতের বেলা অফিস করার বিড়ম্বনা তো আছেই!
তবে এসব ব্যাপারে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চান না কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রবীণ এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন- প্রবীণ নেতারা যদি ভূমিকা রাখার সুযোগ না পান, তাহলে দল ইমব্যালেন্স হয়ে যাবে। নবীণরাও কিছু শিখতে পারবে না। আমরা সুদিনের অপেক্ষায় আছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৭
এজেড/জেডএম