বুধবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সম্পর্কে ২০ দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সফরে তিনি তৃপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এই সফরের ফলাফলে তৃপ্ত তো নয়ই, বরং আতঙ্কিত। কারণ, জনগণ জাতীয় স্বার্থবিরোধী এক গাদা চুক্তি ও সমঝোতা চায়নি। হিসাবের পাওয়া চেয়েছে।
তিনি বলেন, এই সফরের আগে দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ও শংকিত ছিলাম। কারণ, প্রস্তাবিত চুক্তি ও সমঝোতা নিয়ে সফরের আগে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এই গোপনীয়তার কারণে সকলের মধ্যে যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিলো সফরের পর তা যথার্থ প্রমাণ হয়েছে।
জনগণকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার মতো বিষয়ের কোনো অগ্রগতি হয়নি। সুতরাং এই সফরকে দেশবাসী কেবল দেওয়ার এবং কিছু না পাওয়ার চরম ব্যর্থ সফর বলেই মনে করে।
বর্তমান সরকারকে জনগণের প্রতিনিধিত্বহীন সরকার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, প্রহসনের মাধ্যমে নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত কার্যকর কোনো বিরোধী দল নেই। ফলে দেশে বলবৎ রয়েছে একতরফা স্বৈরশাসন। জনগণের সম্মতি ও জনগণের প্রতিনিধিত্বহীন এ ধরনের সরকার জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার রাখে না।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারত ন্যাক্কারজনকভাবে হস্তক্ষেপ করেছিলো অভিযোগ তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সেই কলঙ্কিত ও প্রহসনের নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতের তদানিন্তন সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে ন্যাক্কারজনকভাবে হস্তেক্ষেপ করেছিলো। ভারতের তৎকালীন বিদেশ সচিব বাংলাদেশ সফরে এসে প্রহসনের নির্বাচনের নীল নকশা বাস্তবায়নে প্রকাশ্যে ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, ভারতের সঙ্গে যে কোনো ধরনের চুক্তি বা সমঝোতার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারেনি। তারা কেবল কৃতজ্ঞতার ঋণই ক্রমাগত শোধ করে চলছে। এতে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা। খর্ব করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব- বলেন খালেদা জিয়া।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ভারতের সামরিক পরিকল্পনার অংশ করে এসেছেন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এই সফরে প্রতিরক্ষা বিষয় কোনো চুক্তি বা সমঝোতা না করার ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুধী সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা তাদের জোরালো মতামত ব্যক্ত করেন। আমরাও এ ধরনের চুক্তি না করার জন্য দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু জনগণের দাবি উপেক্ষা করে স্পর্শকাতর বিষয়ে কয়েকটি চুক্তি করা হয়েছে। এর সুদূর প্রসারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে জনগণের সঙ্গে আমরাও বিশ্বাস করি।
ভারতবিরোধী জোরালো বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই, ভারতের সঙ্গে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতার কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করি। সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য, অর্থনীতি, পানিসম্পাদ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া স্বত্তেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ব্যহত করতে ভারতের বিগত সরকারের ভূমিকায় এ দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
জোট নেতাদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতের মওলানা আব্দুল হালিম, বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান, জাগপা শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিম, এনপিপির ডা. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।
** এদেশ বিসর্জন দেওয়া হয়েছে
** আ’লীগ একটি অরাজনৈতিক দল: খালেদা
**শেখ হাসিনা খালি হাতে ফিরে এসেছেন
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
এজেড/জেডএম