দলের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে কৌশলগত কারণে এখনই এ বিষয়ে মিডিয়ায় সরাসরি কথা বলছেন না দলের দায়িত্বশীল কোনো নেতা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। দলটির সে পরিকল্পনা কোন পথে অর্জিত হবে- তারই বিস্তারিত জনসম্মুখে তুলে ধরবেন বিএনপি প্রধান।
গণতন্ত্র, সুশাসন ও উন্নয়নকে মূলমন্ত্র ধরে ‘ভিশন-২০৩০’ শিরোনামে রচিত বিএনপির নির্বাচনপূর্ব প্রাথমিক এ ‘ইশতেহার’ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরবেন খালেদা জিয়া।
দলীয় সূত্রমতে, ‘ভিশন-২০৩০’ নিয়ে দেড় বছর ধরে কাজ করছে বিএনপি। গত বছরের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো এ ভিশন সামনে আনেন খালেদা জিয়া। বিষয়টি তখন ছিল খসড়া পর্যায়ে। গত কয়েক মাস ধরে এ নিয়ে দলটির সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কাজ করে। ‘ভিশন-২০৩০’ এখন চূড়ান্ত।
বিএনপি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘ভিশন-২০৩০’ তৈরির সময় তারা দলের প্রধানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ করেছেন, মতামত নিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের।
কারণ, ‘ভিশন-২০৩০’ কে পাথেয় ধরেই আগামী নির্বাচনের মূল ইশতেহার তৈরি করবে বিএনপি। একে বিএনপির অঙ্গীকারনামা হিসেবেও দেখছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তারা কী করবে, তা শুধু দেশের জনগণই নয়, বাংলাদেশের বন্ধু দেশ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকরাও জানতে চান।
সে পরিকল্পনা সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরতেই ‘ভিশন-২০৩০’ প্রকাশ করবে বিএনপি।
বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আমরা যতোবার বৈঠক করেছি, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়টি উত্থাপন করেছি, ততোবারই তারা বলেছেন, বিষয়টি কী আমরা জানতে চাই। তখন আমরা বলেছি, ওটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। শিগগিরই তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে’।
জানা গেছে, নতুন ধারার রাজনীতি প্রবর্তন, সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, জাতীয় সংসদকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট করা, গণভোট চালু, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনাসহ নানা বিষয় থাকছে ‘ভিশন-২০৩০’-এ।
তাছাড়া বিএনপি যেহেতু নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেহেতু নতুন সামাজিক সমঝোতা বা চুক্তিতে উপনীত হতে উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দেবেন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে- এ উপলব্ধি থেকে এর অবসানে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার কথা বলবে বিএনপি।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণের সম্মতি গ্রহণের পন্থা ‘রেফারেন্ডাম’ বা ‘গণভোট’ ব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃপ্রবর্তনের বিষয়টিও থাকছে পরিকল্পনায়। সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা পূরণে বাংলাদেশের সব ধর্মবিশ্বাসের মানুষ, পাহাড় ও সমতলসহ সব অঞ্চলের মানুষ এবং প্রতিটি নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে একটি জনকল্যাণমূলক, সহিষ্ণু, শান্তিকামী ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলার কথাও বলা হচ্ছে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’- এ।
এছাড়া ক্ষমতায় গেলে সুনীতি, সুশাসন ও সু-সরকারের সমন্বয় ঘটাতে চায় বিএনপি। গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো সাংবিধানিক ও আধা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণমুক্ত করার কথা বলা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে, এমন পরিকল্পনাও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ এ। এটি আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরবো। জনগণ যদি এ ব্যাপারে আরো কোনো পরামর্শ দেয়, সেটিও গ্রহণ করা হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৭
এজেড/এএসআর