বুধবার (১০ মে) রাজধানীন হোটেল ওয়েস্টিনের বলরুমে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ উপস্থাপনকালে এ ঘোষণা দেন তিনি।
৪১ পাতার এ ‘ভিশন ২০৩০’-তে বিষয় ভিত্তিক ৩৭টি অধ্যায় রয়েছে।
২৫৬টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত বিএনপির এই ‘ভিশন ২০৩০’ তে সরকারে বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বরং ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কী করতে চায়, কীভাবে করতে চায়, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কেমন বাংলাদেশ তারা রেখে যেতে চায়, তারই বিস্তারিত বয়ান রয়েছে ‘ভিশন ২০৩০’ তে।
দুই ঘণ্টাব্যাপী লিখিত বক্তব্যের শুরুর দিকে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। বিএনপি সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুন:প্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুন:স্থাপন করবে।
জনগণের বৃহত্তর সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ গড়ে তোলার মহৎ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাওয়াই বিএনপির লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য প্রয়োজন হবে সকল প্রকার বৈষম্য ও ভেদাভেদ ভুলে দেশ গঠনে সবার কর্মপ্রয়াসকে কাজে লাগানো।
বিশেষ ক্ষমতায় আইন ১৯৭৪ বাতিলের ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মযার্দায় বিশ্বাসী। তাই সকল প্রকার নিষ্ঠুর আচরণ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও খুনের অবসান ঘটাবে বিএনপি।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত, যুগোপযোগী করে তোলারও ঘোষণা দেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় মযার্দা অক্ষুণ্ণ রাখতে বিএনপি বদ্ধপরিকর। বিএনপি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। একইভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেবে না। কেউ হস্তক্ষেপ করতে এলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
বিএনপি সব মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রের ‘সম্মানিত নাগরিক’ ঘোষণা করা হবে জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, দু:খজনক হলেও সত্য- স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের কাঙ্ক্ষিত মযার্দায় অধিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি।
জঙ্গিবাদ জাতির জন্য বিপজ্জনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, আইনের শাসনের অভাব ও মানবাধিকার লংঘন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের অন্যতম কারণ। এ সমস্যার সমাধান করতে না পারলে জাতীয় উন্নয়নের সকল প্রয়াসই ব্যর্থতায় পর্যবশিত হবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য তীব্রতর হচ্ছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি দারিদ্র্যবান্ধব ও সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বাস করে। প্রবৃদ্ধির হারকে বৃদ্ধি করে সুষম বণ্টনের মাধ্যমে বিএনপি ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করবে।
শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ ভাগ ব্যয় করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, মেয়ে ও ছেলেদের জন্য স্নাতক পযর্ন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে বিএনপি বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষাণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার আইসিটি সেক্টরে উন্নয়নের বাগাড়ম্বর করলেও বাস্তব চিত্র সুখকর নয়। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমউনিকেশনের তথ্য মতে ২০১৬ সালে আইসিটি সেক্টরে ১৭৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫তম যা মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের নিচে।
তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করার ঘোষণা দিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক, আইটি বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের সমন্বয়ে বিএনপি একটি কমিশন গঠন করবে। কমিটির সুপারিশক্রমে প্রিন্ট, ইলেট্রনিক ও অনলাইনের জন্য গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করবে।
যুব, নারী ও শিশুদের জীবন বিকাশে যথোপযুক্ত উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের অঙ্গিকার রয়েছে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’-তে। বিষয়টি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক বিকাশে নারীর অবদানকে দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করে বিএনপি। শিশু সন্তান রেখে নারীরা যাতে কাজে মনোবিবেশ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে অধিকসংখ্যক ডে কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার জন্য সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গড়ে তোলা হবে।
খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি অ্যাউবের্ত, ব্রিটিশ হাইকমিশনের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান আদ্রিয়ান জোনস, ইরান দূতাবাসের পলিটিক্যাল সেক্রেটারি মেহেদী তোরাবি, ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব ফিতরী তিজান্দ্রা প্রিজানতি, তুরস্ক দূতাবাসের উপ প্রধান ওরহান আইর্যাক, অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের উপ প্রধান শ্যাল্লি অ্যানি ভিনসেন্ট, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিলর (পলিটিক্যাল, ট্রেড, প্রেস ও ইনফরমেশন) কনসট্যানটিনস ভার্ডাকিস, ইউএনডিপির জুনিয়র প্রফেসনাল কনসালটেন্ট চার্লিস ল্যান ডেনহেজ।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এমকে আনোয়ার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ প্রমুখ।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, সৈয়দ আবদাল আহমদ, কাদের গণি চৌধুরী, ইলিয়াস খান, মুরসালিন নোমানী প্রমুখ।
জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭/আপডেট ১৭৩৭ ঘণ্টা/ আপডেট ২১২৫ ঘণ্টা
এজেড/এইচএ/জেডএম
** জনগণের হাতে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি
** ক্ষমতায় গেলে মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার মার্কিন ডলার
** ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসি’তে বিশ্বাসী নয় বিএনপি
** বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সঠিক তালিকা করবে
** প্রধানমন্ত্রীর ‘একক ক্ষমতা’য় ‘ভারসাম্য’ আনবে বিএনপি
** ৩৭ দফায় ভিশন ২০৩০ ঘোষণা বিএনপির
** উন্নত ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ
** জনগণের হাতে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি