ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

শূন্যগর্ভ ভূপতিত ভিশন ২০৩০

পলিটিক্যাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
শূন্যগর্ভ ভূপতিত ভিশন ২০৩০ ভিশন ২০৩০ উপস্থাপন করছেন খালেদা জিয়া/ ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: মোটেও সাড়া জাগাতে পারে নি বিএনপি’র ভিশন ২০৩০। খালেদা জিয়ার পুরো উপস্থাপনাটিই পরিণত হয়েছে পণ্ডশ্রমে। শূন্যগর্ভ রাজনৈতিক বক্তব্য হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে ভিশন ২০৩০। 

অন-লাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, টিভি টক শো’তে ভিশন ২০৩০ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক মনোভাবের কথাই প্রচারিত হয়েছে। সাধারণত বিরোধী দল জনগণের একটি সহানুভূতি পেয়ে থাকলেও বাস্তবায়নের ক্ষমতা ও যোগ্যতাহীন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপি’র ভিশন ২০৩০ তেমন কোনো আগ্রহই মানুষের মধ্যে জাগাতে পারে নি।

অনেকগুলো পাতার দলিল ভিশন ২০৩০-এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ হলো ‘হবে’। সবই প্রতিশ্রুতি ও আশাবাদ। ক্ষমতায় যেতে পারলেই সেসব পালন করা বা না করার সুযোগ আসবে।  

কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল শুধু ক্ষমতায় থাকবে, তা হয় না। ক্ষমতার বাইরেও দলকে থাকতে হয়। বিএনপি এখন তেমনি ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। ক্ষমতার বাইরে থেকে বর্তমান সময়ে বিএনপি কি করছে বা করবে, সেটাই বড় কথা হওয়া উচিত। দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের স্বার্থে, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ হটাতে বর্তমান সময়ের সঙ্কুল পরিস্থিতিতে বিএনপি কি করেছে, তার বিন্দুমাত্র উল্লেখ ভিশনের কোথাও নেই।

বর্তমানকে বাদ দিয়ে যে ভবিষ্যত হয় না, ভিশন প্রণেতারা এ সত্যটি ভীষণভাবে অবজ্ঞা করেছেন।

চরম দুঃশাসন ও লুটপাটের মাধ্যমে ক্ষমতা-হারা বিএনপি বর্তমান সময়ে কিরূপ সংশোধন ও শুদ্ধি অভিযান দলের ভেতরে ও বাইরে চালিয়েছে, সে কথার ধারে-কাছেও যায় নি ভিশন ২০৩০।  

ভিশনের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো, বিএনপি তার অতীত ও বর্তমানের ভুলগুলোর কোনোই আত্মসমালোচনা করে নি। বরং অতীত-বর্তমানের অযোগ্যতাকে চেপে রেখে ভিশন ২০৩০ কেবলই ভবিষ্যতে কি করবে, তেমন ওয়াদার ফুলঝুরি সাজিয়েছে।  

মানুষ বর্তমানের কাজ-কর্ম দিয়ে ব্যক্তি বা দলকে মূল্যায়ন করে। ভবিষ্যতে আদৌ কি করবে বা করবে না দিয়ে কাল্পনিকভাবে কাউকে আগাম মূল্যায়ন করা যায় না।

বিএনপিকেও ভবিষ্যতে এই হবে, সেই হবে-এর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দিয়ে আগাম মূল্যায়ন করার কোনো কারণ নেই। রাজনীতির বাস্তব ক্ষেতে তেমন কোনো সুযোগও নেই।

জন্মের সময় নাতি দেখে গ্রামের চৌধুরী সাহেব এই দাবি করতেই পারেন যে, বড় হয়ে নাতিটি তার ন্যায়বিচারক হবে। নাতি আইন পাশ না করলে দাদার হবে হবে-এর ভিত্তিতে নাতিকে কেউ জজ-ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়োগপত্র এনে দেবে না।

বিএনপি’র হবে-হবে, করবো-করবো ইত্যাদি বাগাড়ম্বরের ওপর আস্থা স্থাপনের সুযোগও তাই মানুষ পাচ্ছে না। কারণ, অতীতে বহুবার ক্ষমতায় থেকে তারা তাদের উচ্চারিত হবে-হবে’কে বাস্তবায়িত করে নি।  

কুমিরের ছানা দেখানোর মতো হবে-হবে’কে দেখিয়েই যাচ্ছে।

ভবিষ্যতের আস্থা আসে অতীত ও বর্তমানের কর্মকাণ্ডের সাফল্যের ভিত্তিতে। অতীতে বাংলাদেশে বিএনপি একাধিক বার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে। ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল করলেও, সে সুযোগের সামান্যতম রাজনৈতিক সদ্ব্যবহার দলটি করতে পারে নি। ওয়াদাকৃত অনেক কিছুই করে নি।  

নব্বুই-এ গণতন্ত্রের নবঅভিযাত্রার প্রত্যাশা ক্ষমতাসীন বিএনপি নস্যাৎ করেছে। স্বৈরাচারী এরশাদের জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর পদটিকে চরম ক্ষমতাশালী করেছে। এতে দেশের বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিন্দুমাত্র লাভ হয় নি। ব্যক্তিগতভাবে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা লাভবান হয়েছেন। পরবর্তীতে আরো দুইবার ক্ষমতায় এসেও বিএনপি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পরিচ্ছন্ন এবং সুশাসনের বিষয়গুলোকে নিবিঘ্ন করতে পারে নি বা করে নি। গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে পারিবারিক শাসন চালিয়েছে পছন্দের কিছু আমলা এবং দুইটি জেলার মানুষের মাধ্যমে। এ কারণেই বগুড়া ও ফেনী-নোয়াখালীর প্রসঙ্গ বিএনপি’র কথা ওঠলেই চলে আসে।  

এমন কি, ভিশন ২০৩০ প্রণয়নের পেছনেও ১/১১-এর সুবিধাপ্রাপ্ত একজন সামরিক-অনুগত বুদ্ধিজীবীর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। শুধু ১/১১ নয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে সমগ্র দেশবাসী যখন দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম করছে, তখন উক্ত বুক্তিজীবী পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়ে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও যোগসাজশ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে কৌশলজনক অবস্থান গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ‘একাত্তরে আমি জেলে ছিলাম’ বলে তিনি তৎকালে চীনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী ও পাকিস্তানপন্থি সকল কুকর্মকে আড়াল করে থাকেন।

এবার বিএনপি’র অতীতকে ভবিষ্যতের চটকদার স্বপ্নের মাধ্যমে আড়াল করতে গিয়ে তিনি ধরা খেয়েছেন। বিএনপি এবং দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও ডুবিয়েছেন।

রাজনীতিতে দফা বা কর্মসূচির একটি গুরুত্ব রয়েছে। ২১ দফা. ৬ দফা, ১১ দফা বাংলাদেশের রাজনীতির একেকটি মাইল ফলক। দফার সম্প্রসারিত রূপ হিসাবে ভিশন বা রূপকল্পকে ধরা যায়। আওয়ামী লীগ যেমনভাবে রূপকল্প দিয়ে কর্মী ও জনগণের মধ্যে আশাবাদ সঞ্চারিত করেছে, সে পথ অনুসরণ করে বিএনপিও চেয়েছিল ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে মুখ থুবড়ানো দলীয় রাজনীতিকে টেনে তুলতে।  

চরম গোপনীয়তার মাধ্যমে পরম পছন্দের মানুষদের দিয়ে প্রণীত ভিশন ২০৩০ দল ও জনগণকে উজ্জীবিত করতে প্রচ-ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দলে গতিশীলতা আনার জন্য বিএনপি’র এই পরিকল্পনা বরং কাজের কাজ কিছুই করতে পারে নি। ফলহীন পরিশ্রমের একটি উদাহরণ হয়ে ভিশন ২০৩০ নিজেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূপতিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় ১৩৪৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।