ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

বিএনপিতে ‘কোটিপতি’ গুরু-শিষ্যের লড়াই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
বিএনপিতে ‘কোটিপতি’ গুরু-শিষ্যের লড়াই গুরু-শিষ্য

ময়মনসিংহ : রাজনীতিতে তারা ছিলেন গুরু-শিষ্য। দু’জনই ব্যবসায়ী। অর্থ সম্পদেও তারা কোটিপতি। ছাত্র রাজনীতির দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে একজন উঠে এসেছেন মূল দলের রাজনীতিতে। তারই এক সময়কার শিষ্য কেন্দ্রের এক নেতার বিশেষ অনুকম্পায় নাটকীয়ভাবেই এক দৌড়ে ভাগিয়েছেন জেলার রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক পদ!  

দলের ভেতরে-বাইরে নিজের অবস্থান শক্ত করতে একজন সরকার হটাতে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। মামলায় ঝুলেছেন, কারাবরণও করেছেন।

আরেকজন নিজেকে নিরাপদে রাখতেই দূরে দূরে থেকেছেন। ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আসন্ন নতুন কমিটিতে নীতি নির্ধারণী দুই পদের একটি পাওয়ার জন্য লড়ছেন ত্যাগী গুরু।

একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়েও শিষ্য কোমর বেঁধে নেমেছেন শুধু তাকে ঠেকানোর মিশনে। গুরুর জন্য এ পদ মর্যাদার। আর শিষ্যের জন্য তা যেন রীতিমতো ছড়াচ্ছে ‘জুজুর ভয়’।

তবুও কৌশল, পাল্টা কৌশলেই নিজেদের ভিন্ন মিশনেই এগুচ্ছেন সাবেক ছাত্র নেতা, দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ফকরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদুল আলম।

দীর্ঘ রাজনীতির অভিজ্ঞতায় বাচ্চু কী মূল্যায়িত হবেন, না কি এক সময়কার সতীর্থ মোর্শেদের সিন্ডিকেটের কুটকৌশলের জয় হবে এমন জল্পনা চলছে দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঝেও।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ভালুকা উপজেলায় ছাত্রদলের স্কুল কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবার মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় ফকরুদ্দিন বাচ্চুর। এরপর উপজেলা ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ পদবীর পর জেলা ছাত্রদলের রাজনীতিতে উত্থান হয় তার।

দু’ কমিটিতে ছিলেন অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে।

২০০৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে দলীয় মনোনয়ন পান তিনি। আর ২০০৯ সালে উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক ও সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্বে আসেন বাচ্চু।

৯৬’র শেষের দিকে পুরোপুরি নেমে পড়েন ঠিকাদারী ব্যবসায়। তার ঝুলিতে রয়েছে বেশ কয়েকবারের শীর্ষ করদাতার সম্মান।

একই সূত্র জানায়, স্থানীয় উপজেলা বিএনপি’র রাজনীতিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদুল আলমের উত্থান ঘটে বাচ্চুর হাত ধরেই। সময়টা ২০০৯ সাল।

ওই সময়ে উপজেলা বিএনপি’র শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক পদ দেয়া হয় তাকে। আর এতেই গো ধরে বসেন মোর্শেদ। তার খায়েশ ছিল যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার।

এক সময়কার ঝুট ব্যবসায়ী ও পরবর্তীতে ভূমি ব্যবসায়ী মোর্শেদ সেই ঝাল মেটান কেন্দ্রের এক নেতাকে বিশেষ কায়দায় ম্যানেজ করে। দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কেন্দ্রে দাখিলকৃত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তার নাম না থাকলেও নাটকীয়ভাবে তাকে কেন্দ্র থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

এ ঘটনার জের ধরে সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন কেন্দ্রের এমন আচরণে ওই সময় মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, টাকা পয়সা খেয়ে কেন্দ্র মনগড়া কমিটি করে।

সূত্র মতে, গুরু-শিষ্যের বিরোধের সূত্রপাত মূলত সেই থেকেই। এরপর জল অনেক গড়িয়েছে। দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র ঘনিয়ে আসা নতুন কমিটিতে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন ফকরুদ্দিন বাচ্চু। জেলার রাজনীতিতে তাকে ঠেকাতে ব্যবসায়ী নেতাদের সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মোর্শেদ।

নিজে এ পদে প্রার্থী না হলেও মূলত বাচ্চুর পদে কাঁচি বসাতেই হন্যে হয়ে ছুটছেন কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতাদের দুয়ারে, এমন আওয়াজ নিজেই দিচ্ছেন মোর্শেদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মোর্শেদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ’৮৮ সাল থেকে আমি ছাত্রদলের রাজনীতি করি। কারো হাত ধরে রাজনীতিতে আসিনি।

উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক না হতে পারলেও কেন্দ্র থেকেই জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়ে এসেছি। বাচ্চু সাহেব অনেক চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারেননি।

তিনি বলেন, বাচ্চু আমাকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হারিয়েছেন। তিনি যেখানেই থাকবেন আমি সেটার অপজিশন গ্রুপে থাকবো। দরকার হলে খরচ করবো। উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও দলীয় মনোনয়ন পাবো এটা নিশ্চিত।

’৮৮ সালে ছাত্রদলের রাজনীতিতে মোর্শেদ ছিলেন না জানিয়ে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ বাংলানিউজকে বলেন, ওই সময় আমি জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ছিলাম। ওই সময় মোর্শেদ রাজনীতিতেই আসেননি। মূলত এটা তার প্রপাগান্ডা।

এসব বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ফকরুদ্দিন বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, মোর্শেদ রাজনীতিতে আমার সমকক্ষ নয়। তাকে আমি প্রতিপক্ষ মনে করি না।

তাকে আমিই উপজেলা বিএনপি’র সম্পাদক বানিয়েছিলাম। সে ভুল করলেও আমি ভুল করতে পারি না। ’  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।