ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

উপেক্ষিত হয়েও সরব পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীরা

পলিটিক্যাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৭
উপেক্ষিত হয়েও সরব পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীরা উপেক্ষিত হয়েও সরব পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীরা

ঢাকা: বিএনপিতে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত, অবহেলিত ও অসম্মানজনক স্থানে রয়েছেন পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা, যদিও তারাই দলের জন্য সবচেয়ে বেশি সরব। দলের বিভিন্ন অফিসে ও সভা-সমাবেশে চেয়ার দখলের এতো উগ্র প্রতিযোগিতা যে, সেখানে নিরীহ পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীরা টিকতেও পারছেন না। এতো বড় ও পুরাতন দলের কোনো ‘থিংক ট্যাংক’ আছে বলে মনে হয় না। দলের এতো এতো পদে ও উপদেষ্টা আসনে সাবেক সামরিক-বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী বসে থাকলেও প্রকৃত পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীর স্থান নেই। অথচ বিগত আন্দোলনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের সর্বত্র মাঠে-ময়দানে সরব ছিলেন পেশাজীবী-শিক্ষাবিদ-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরা। এখনও বিএনপির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতা পেশাজীবীদের নানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নিজেদের রাজনৈতিকভাবে জীবিত রাখছেন।

আগের কিস্তি পড়ুন
** দিশেহারা বিএনপি-৮: এখনও মশগুল অতি-আত্মবিশ্বাসের তৃপ্তিতে

** দিশেহারা বিএনপি-৭: অগোছালো অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বেহাল দশা
** দিশেহারা বিএনপি-৬: নেতা বহু সংগঠক নেই, রুটিনে আবদ্ধ মহাসচিব​
** দিশেহারা বিএনপি-৫: সর্বত্র ক্রনিক কোন্দলের ছায়া
** দিশেহারা বিএনপি-৪: কৌশলের চক্কর ও সমন্বয়হীন আন্দোলন
** দিশেহারা বিএনপি-৩: নির্ভরশীলতায় হ্রাস নিজস্ব সামর্থ্য
** দিশেহারা বিএনপি-২: দুর্নীতি-সুবিধাবাদে গ্রাস নেতৃত্ব
** 
দিশেহারা বিএনপি-১: দলের ভেতরে-বাইরে হতাশার বিষবাষ্প
বিএনপির মধ্যে পেশাজীবীভিত্তিক রাজনীতির জোয়ার এনেছিলেন দৈনিক আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। স্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে যে, মাহমুদুর রহমানের রাজনৈতিক উত্থান ও জনপ্রিয়তা বিএনপির রাজনীতির বহু নেতাই মেনে নেননি।

সেসব নেতা মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ’র যাবতীয় সাহায্য-সহযোগিতা নিলেও তাকে যোগ্য স্থান দিতে নারাজ।

এ বিষয়ে একজন প্রবীণ সাংবাদিকের ক্ষোভ এমন, ‘বহু বছর ধরে বিএনপির পক্ষে লিখলেও তারা একটি ইফতার পার্টিতে পর্যন্ত দাওয়াত দেয়নি। তারা জানারও প্রয়োজন বোধ করে না যে, কে বিএনপিপন্থি আর কে বিএনপিবিরোধী। এর কারণ হলো, একদল কোটারি বিএনপির শীর্ষ নেতাকে ঘিরে রেখেছে। তারা সকলের সঙ্গে দলের সংযোগ হোক, সেটা চায় না। এক বা দু’জন মাত্র ব্যক্তি সাংবাদিক সমাজ বা পেশাজীবী সমাজের নেতৃত্বের সোল-এজেন্সি নিয়ে বিএনপিতে বসে আছেন। এ কোটারির কবল থেকে বের হতে পারছে না বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব। ’

প্রকৃত অর্থেই বিএনপিতে পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের কাজ করা দুরূহ। ত্যাগী বা একনিষ্ঠ বিএনপিপন্থি হলেই হবে না, বিশেষ কোনো সাংবাদিক বা চিকিৎসক নেতার লোক তাকে হতে হবে। নইলে বিএনপিতে তার দরজা বন্ধ। এছাড়া সম্মানজনক মনোভাবও নেই দলের অফিস কর্মচারীদের মধ্যে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাবেক উপাচার্যকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা গুলশান অফিসে বসিয়ে রাখা হয়েছে। অর্থ বা অন্যান্য সুবিধা দিয়ে ব্যবসায়ীরা যত দ্রুত গুলশান অফিসে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, পেশাজীবী-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীরা সেটা পারেন না। অধিকাংশ সময়েই তাদের গুলশান অফিসের ফটক থেকেই ফিরে আসতে হয়।

ক্ষমতায় থাকাকালেও বিএনপির অনুসারী পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ যেখানে হাজারখানেক দলীয়পন্থি শিক্ষক-সাংবাদিককে বিভিন্ন সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত করেছে, বিএনপি সেখানে মুষ্টিমেয়কে সুযোগ দিয়েছিল। তার মধ্যে অনেককেই আবার টাকা খরচ করতেও হয়। বিএনপি দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষাবিদকে মাঝারী মর্যাদাসম্পন্ন একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান করে। বিরক্ত ও অসম্মানিক শিক্ষাবিদ যখন রাগে-দুঃখে-অপমানে পদত্যাগ পদ জমা দিতে যান, তখন কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির বদলে পিয়ন দিয়ে সেটা রিসিভ করানো হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল হুদা মুসা দলের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। তার পিতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ইনাম-উল-হক বিএনপি রাজনীতির একজন প্রবীণ, বিশ্বস্ত ও নিবেদিতপ্রাণ সমর্থক। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি পূর্ণকালীনভাবে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হন। কিন্তু অল্প দিন পরেই তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার পক্ষে বিএনপির রাজনীতি করাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। দলের জন্য প্রিয় সন্তান হারিয়েও বিএনপিতে তার যোগ্য স্থান হয়নি।

এখন বিএনপির পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীরা আশাহত। অনেকেই ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, দলের জন্য সভা, সমাবেশ, সেমিনার, মানববন্ধনসহ প্রতিনিয়ত কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু দল সেটা জানে বলেও মনে হয় না। দল আমাদের চেনেও না। তবুও মনের টানে কাজ করছি।

এমন অবস্থার কারণ হলো, এক বা একাধিক ব্যক্তিই পুরো দেশের পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী রাজনীতির সোল-এজেন্সি নিয়ে বসে আছেন। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিগত বিএনপি আমলে সুবিধাভোগী কিছু বিতর্কিত বুদ্ধিজীবী, যারা দল আবার ক্ষমতায় এলে বিভিন্ন লাভজনক সরকারি পদের জন্য ঝাঁপ দেবেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ ও মাঝ-বয়সী যেসব পেশাজীবী-শিক্ষাবিদ ত্যাগী ও পরিশ্রমী ভূমিকা পালন করছেন, তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। সুযোগ না পেয়ে অনেকেই হতোদ্যম। এমনকি হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের সঙ্গে দল গঠনে, দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে এবং লেখালেখির মাধ্যমে নিয়োজিতদের দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।  

এখন যারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে ও বিএনপির পক্ষে লেখালেখি করছেন বা নানারকমের বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাদেরকে বিএনপি স্বীকৃতি দেয় বলে মনে হয় না। কেন্দ্রীয় নেতারা সেসব লেখা পড়েন বা লেখকদের চেনেন বলেও মনে হয় না। অথচ আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে তার পক্ষের লেখক-কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীদের চেনেন এবং খোঁজ-খবর নেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও তার পক্ষের লেখক-গবেষকদের সম্পর্কে স্পষ্ট খোঁজ-খবর রাখতেন। বিএনপি এখন নিজের লোকদের খবর নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বহুদূরে সরে এসেছে।    

পরের কিস্তি পড়ুন: দিশেহারা বিএনপি-১০: পথের শেষ কোথায়?

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৭

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।