ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপি

বাগাড়ম্বর চক্রব্যূহে বিএনপি, মামলার ঘেরাটোপে খালেদা

অন্তু মুজাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
বাগাড়ম্বর চক্রব্যূহে বিএনপি, মামলার ঘেরাটোপে খালেদা

ঢাকা: প্রায় একযুগ হতে চললো ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হার ও দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন বিএনপিকে ঠেলে দিয়েছে একটি বাগাড়ম্বরের চক্রব্যূহে। যেখানে রয়েছে কথার ফুলঝুরি, নিষ্ফল হুংকার, ক্রন্দনহীন আর্তনাদ। আর একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে চাঙ্গা হওয়া দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলায় খাবি খাচ্ছে গোটা দলের ভূত-ভবিষ্যৎ। 

নির্বাচন ও খালেদার মামলা নিয়ে অনেকটা বিভক্তমত দলে। দলের চেয়ারপারসনের মতো নেতাকর্মীরাও ক্রমাগত আওড়ে যাচ্ছেন তোতাপাখির মতো বুলি।

নির্বাচনে তারা যাবেনই যাবেন, কিন্তু মানতে হবে শর্ত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বাধ্য করবেনই করবেন, দেশের জনগণ, দলের নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে রয়েছে বলেও দাবি। কিন্তু আদতে অবস্থা ‘আঙুর ফল টক’। এসব চিন্তা-বক্তব্য বিএনপিকে পরিণত করছে ‘হাস্যকর’ দলে।

ক্ষমতাসীন হয়েও আওয়ামী লীগ যখন শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছে তখন বিএনপির প্রস্তুতি ‘এগিয়ে চলেছে’। সেই প্রস্তুতি কেমন, তার স্পষ্ট কোনো রূপরেখা এখনও অদৃশ্যমান। তবে দৃশ্যমান দলের বড় নেতাদের বাগাড়ম্বর! দল চলছে ‘নির্দলীয় সরকার’, ‘সহায়ক সরকার’ ‘প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি’, ‘খালেদা জিয়ার সাজা হলে নির্বাচনে যাবে কি যাবে না’র ঘেরাটোপে।

অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দলের একাংশের নেতারা যে কোনো মূল্যে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। বর্জন তারা কোনোভাবেই ‘সঠিক’ সিদ্ধান্ত বলে মানতে নারাজ। আবার তারাই দেশের জনগণ সঙ্গে আছে বললেও বিগত কয়েক বছরে সেটাও সেই ‘ঈদের পর আন্দোলন’ এর মতো বুলির মধ্যেই থমকে আছে। তাই শেষতক জনগণ, নেতাকর্মীরা আদৌ মাঠে নামবে কি-না সেটাও বলে দেবে সময়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি তাদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে। একইসঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের বিচারাধীন মামলায় সাজার বিষয়টি মাথায় রেখে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ‘খালেদা জিয়ার বিকল্প’ চিন্তা করছে বলেও নানা মহলে আলোচনা তুঙ্গে। তবে এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। এই বিকল্প চিন্তাও দলটির জন্য একটি পাহাড়সম ধাক্কা!  

বর্তমান অবস্থায় প্রশ্ন দলটির সক্ষমতা নিয়ে। জটিল পরিস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীরা ঠিকই দ্বিধা-বিভক্ত। এমতাবস্থায় আন্দোলনের যেটুকু সম্ভাবন‍া ছিল তাও ফিকে হয়ে আসছে। আর আন্দোলনে নামলে আওয়ামী লীগ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে- এটা ভাবারও কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অন্তত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের নেতাদের বক্তব্যে সেটা স্পষ্ট।

বিভক্ত হওয়া বিএনপির একাংশের নেতারা বলছেন, প্রায় এক যুগ (১০ বছর) ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে বিএনপি সংকটময় সময় পার করছে। দুর্বল হয়ে পড়েছে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো। এখন যে কোনোভাবেই হোক তাদের পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব জরুরি। সে কারণেই দলটিকে নির্বাচনে যেতে হবে। আগামী নির্বাচনও কোনো কারণে বর্জন করলে দলের অস্তিত্ব সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে সেটা এখন দলের প্রান্তিক নেতারাও বোঝেন।  

অপর অংশের নেতারা মনে করেন, যদি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে যায় এবং এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে গিয়ে বিএনপি একটা খেলার পুতুল হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি দল হিসেবে তারা কোণঠাসা অবস্থায় থাকবে। সেজন্য সর্ব শক্তি দিয়ে হলেও বিএনপিকে আন্দোলন-সংগ্রামে থাকতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে হবে।

এদিকে নির্বাচন ও আন্দোলনের বিষয় ছাড়াও বিএনপির তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় নেতারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত। তারা মনে করেন, ইতোমধ্যে খা‍লেদা ও তারেক রহমানের একটি মামলার রায় হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ কয়েকটি মামলার রায় অপেক্ষমাণ।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুনীতি মামলাসহ বেশকিছু মামলা চলমান। খালেদা ও তারেকের যদি সাজা হয়, তাহলে তারা নির্বাচনের অযোগ্য হয়ে যাবেন। তখন নেতৃত্বশূন্যতায় অস্তিত্ব সংকটে পড়বে দল। তাদের বিকল্প কী হবে, কিংবা তাদের ছাড়া নির্বাচনে যাবে কিনা- সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ বরাবরের মতোই বলে আসছে ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। অর্থাৎ, সংসদ বহাল রেখে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ’

এ ঘোষণার পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক সমাবেশে বলেন, ‘বিএনপিকে বাদ দিয়েও কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা নির্বাচন করবো, চাইলেও বাইরে রাখা যাবে না। সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। ’  

আর বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এক সভায় বলেছেন, খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে ষড়যন্ত্রমূলক মামল‍ায় সাজা দিলে এর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। ’

যদিও এই দাঁতভাঙা জবাবের কথা বিগত ১০ বছর ধরেই বলে আসছে বিএনপি। এই জবাবও হয় ‘চক্রব্যূহ’ নয়তো ‘ঘেরাটোপে’।

বিগত দিনগুলোতে দেখা গেছে, দলটি নান‍া কর্মসূচি দিলেও তা কেবল বক্তৃতা-বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ। কোনো নেতাকর্মীকে মাঠে পাওয়া যায়নি। আর ৭ নভেম্বর উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দীতে জনসভায় বিশাল শোডাউন করলেও পথে নেমে আন্দোলন করার কেউ আছে কি নেই তার প্রমাণ এখনও মেলেনি।

এসব বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির মতো জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের আবার প্রস্তুতি নেওয়ার কী আছে। সরকার যদি বলে কাল নির্বাচন তবে বিএনপি কালই প্রস্তুত আছে। কিন্তু তারা যদি ২০১৪ সালের মতো ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে চায় সেটা হতে দেওয়‍া হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপে রেখে একইসঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে বিএনপি।  

দলেরও সিনিয়র নেতাদের কথায়ও সেই পুনরাবৃত্তির ঘেরাটোপ!   

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
এএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।