ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

ছাত্রদলের কাউন্সিল: কারা আসছেন নেতৃত্বে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
ছাত্রদলের কাউন্সিল: কারা আসছেন নেতৃত্বে ছাত্রদল

ঢাকা: আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। ২৭ বছর পর ছাত্রদলের এ কাউন্সিলকে ঘিরে প্রার্থীরা ছুটছেন তৃণমূলের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। দুই শীর্ষ পদে ২৮ জন ছাত্রনেতা ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রার্থীদের কাছে পেয়ে উজ্জীবিত তৃণমূলের কাউন্সিলররা।

সারা দেশের ১১৭টি ইউনিটের ৫৮০ জন কাউন্সিলর এবার সরাসরি ভোটে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরদিন মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) থেকেই প্রার্থীরা কাউন্সিলদের কাছে যেতে শুরু করেন।

জেলার দলীয় কার্যালয় কিংবা কাউন্সিলরদের বাড়িতেও যাচ্ছেন প্রার্থীরা। এরই মধ্যে প্রার্থীদের বিগত দিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে মূল্যায়ন করা শুরু করেছেন কাউন্সিলররা। রাজপথে কোনো প্রার্থী ছিলেন। আন্দোলন সংগ্রামে সারাদেশের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর কে নিয়েছেন।

আপিল কমিটি ঘোষিত কাউন্সিলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় সভাপতি পদে রয়েছেন- ফজলুর রহমান খোকন, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, হাফিজুর রহমান, রিয়াদ মো. তানভীর রেজা রুবেল, মো. এরশাদ খান,  এস এম সাজিদ হাসান বাবু, এবিএম মাহমুদ আলম সরদার ও মামুন বিল্লাহ খান।

সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন- মো. জুয়েল হাওলাদার (সাইফ মাহমুদ জুয়েল), মো. আমিনুর রহমান আমিন, শেখ আবু তাহের, শাহ নাওয়াজ, মো. জাকিরুল ইসলাম জাকির, মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম), মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, সাদিকুর রহমান, কে এম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মো. ইকবাল হোসেন শ্যামল, মো. হাসান (তানজিল হাসান), মুন্সি আনিসুর রহমান, মো. মিজানুর রহমান শরিফ, শেখ মো. মশিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা, কাজী মাজহারুল ইসলাম।

সভাপতি হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন। ওয়ান ইলেভেন থেকে সক্রিয় এ নেতার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ মামলা রয়েছে। ২০টির অধিক রাজনৈতিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আন্দোলনে সক্রিয় থাকার জন্য সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের কাছে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। কারা নির্যাতিত এ নেতাকে নিয়ে আশাবাদী ছাত্রদলের তৃণমূলের নেতাকর্মী।

সভাপতি পদে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ আলোচনায় থাকলেও আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাকে নিয়ে তৃণমূলে অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

শ্রাবণের বাবা যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি গত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
 
স্থানীয় সূত্র জানায়, শ্রাবণের এক ভাই কাজী মুস্তাফিজুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। অপর ভাই কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। আর এক ভাই কাজী আজাহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক। যদিও ছাত্রদল করার কারণে শ্রাবণের সঙ্গে পরিবারের সম্পর্ক খারাপ বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সভাপতি প্রার্থী হাফিজুর রহমান সারাদেশে কাউন্সিলদের কাছে পৌঁছানোর জটিল কাজটি এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি ওয়ান ইলেভেনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বলয়-ভিত্তিক প্রার্থী হওয়ায় আলোচনায়ও আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি এসএম সাজিদ হাসান বাবু রাজপথের সক্রিয় নেতা হিসেবে সমধিক পরিচিতি পেয়েছেন।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাইফ মাহমুদ জুয়েল। স্লোগান মাস্টার হিসেবে পরিচিত এ নেতা দলের দুর্দিনে হাইকমান্ডের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে তৃণমূলের আস্থার জায়গায় রয়েছেন। ওয়ার্ড ছাত্রদল থেকে উঠে আসা কারা নির্যাতিত এ নেতার বিরুদ্ধে ৬টির বেশি মামলা রয়েছে।

নির্যাতিত ছাত্রনেতা মো. হাসান (তানজিল হাসান) বিগত দিনে আন্দোলনে তার সক্রিয়তা নিয়ে কাউন্সিলরদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ইকবাল হাসান শ্যামলের রাজনীতিতে বিরতি থাকলেও গ্রুপ রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। নোয়াখালী আঞ্চলিক নেতাদের পছন্দের তালিকা থেকে প্রার্থী হয়েছেন শাহনেওয়াজ। তবে একই অঞ্চলের আরেক নেতা মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম) একই পদে নির্বাচন করায় ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে। আবার তানজিল হাসান, আমিনুর রহমান, ইকবাল হাসান শ্যামল, শাহ নেওয়াজ আর মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম) একই বলয়ের নেতা হওয়ার কারণে ভোটের রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান অনেকটা সুবিধাজনক স্থানে আছেন পরিচিতির দিক থেকে। ডাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তাকে সারাদেশের কাউন্সিলররা চেনেন। অপর দিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ডালিয়া রহমান একমাত্র নারী প্রার্থী হওয়ায় সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছেন। এই দুজন সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রদলের কাউন্সিলে উত্তরাঞ্চল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ৫৮০জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১২৫ জনই উত্তরাঞ্চলের। একারণে প্রার্থীরা উত্তরাঞ্চলকে গুরুত্ব দিয়েই প্রচারণা চালাচ্ছেন। কাউন্সিলরদের সঙ্গে দেখা করে ভোট চাওয়ার পরও প্রতিদিন ফোন করে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

সভাপতি প্রার্থী সাজিদ হাসান বাবু বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচিত হলে সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কঠোর আন্দোলন কর্সসূচি নেওয়া হবে। প্রয়োজনে স্বতন্ত্র কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে ছাত্রদল।

তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন জেলা সফর করছি। সারা দেশের ১১৭টি ইউনিটের ৫৮০ জন কাউন্সিলরদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। তাদের মনে আমাকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা। আমি নির্বাচিত হলে, তাদের প্রত্যাশা অনুয়াযী কাজ করবো।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতি মো. জাকিরুল ইসলাম জাকির বলেন, ছাত্রজীবনে রাজনীতি করতে গিয়ে পুলিশি হয়রারি হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি অনেকবার। ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে ৩৮ টি মামলা হয়েছে। সাভার আশুলিয়া, দারুসসালাম ও পল্টন থানার এসব মামলায় কয়েকবার কারাবরণও করেছি। ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রায়েরবাজার থেকে ডিবি পুলিশ নিয়ে যায়। তিনদিন অজ্ঞাত স্থানে রাখার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিবি মিডিয়া সেন্টারে হাজির করা হয়। আশা করি, কাউন্সিলররা এসব মূল্যায়ন করবেন।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তানজিল হাসান বলেন, ২৭ বছর পর যে প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তা সত্যিই কঠিন। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ছাত্রদলের সারাদেশের সবকটি ইউনিট যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে শক্তিশালী করতে হবে।

ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসমুখী করার কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে শক্তিশালী করতে হবে। সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ইউনিটগুলোতে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মী তৈরি করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার ঘোষক  বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, জিয়াউর রহমান ও বিএনপির অবদান তুলে ধরতে হবে।

গত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাধারণ সম্পাদক পদে। তিনি বলেন, সারাদেশ সফর করে শেষ পর্যায়ে চট্টগ্রামে আছি। ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবো। কেমন সারা পাচ্ছেন জানতে চাইল মোস্তাফিজ বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের ব্যাপক সারা পাচ্ছি। আশা করি, আমার বিগত দিনের ত্যাগ ও শ্রম মূল্যায়ন করবেন তৃণমূলের কাউন্সিলররা।

সাধারণ সম্পাদক পদে একমাত্র নারী প্রার্থী ডালিয়া রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এরই মধ্যেই সারাদেশের কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ শেষ করেছি। যেখানেই গিয়েছি সেখানেই নেতাকর্মীদের সারা পেয়েছি। তিনি বলেন, যদি তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সারা না পেতাল তাহলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াতাম না। অবশ্যই সবার কাছ থেকে ভালো সারা পাচ্ছি। আশা করি, খুব ভালো ফলাফল হবে।

সিন্ডিকেটের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে ডালিয়া বলেন, এসব বিষয়ে আপনারাই ভালো জানেন। আমি একজন প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের আগে সিন্ডিকেট নিয়ে কিছু বলবো না।

তফসিল অনুযায়ী ৩ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন। ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সরাসরি ভোট হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
এমএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।