ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

এখন কী করবে বিএনপি?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
এখন কী করবে বিএনপি?

ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালত বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে আপিলের পর হাইকোর্ট শুনানির জন্য আপিল গ্রহণ করলেও পরে জামিনের আবেদন খারিজ করেছেন। এ খারিজাদেশের বিরুদ্ধে জামিন চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছিলো। কিন্তু সে আবেদন বৃহস্পতিবার খারিজ হয়ে যায়। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এখন কী করবেন বিএনপি? - এমন প্রশ্ন জনমনে।

সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে এসব বিষয় নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র আইনজীবীরা গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছেন। ওই বৈঠকে স্কাইপে তারেক রহমান যোগ দেবেন।

সেখানেই পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, রাতে আমাদের মিটিং শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমি আপাতত এ বিষয়ে আপনার কাছে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।

জামিন খারিজের পর খালেদার জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, এখন আদালত যে আদেশ দিয়েছেন সেখানে কোনো রিজন (কারণ) উল্লেখ করা হয়নি। দেখবো, কী কারণে আমাদের আবেদন খারিজ করা হয়েছে। সে বিষয় দেখে আমাদের একটা সিনিয়র আইনজীবী প্যানেল রয়েছে, ওই প্যানেলের আইনজীবীরা বসে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।  

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কর্মসূচি চলমান। আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। ঢাকায়ও হয়েছে। ধাপে ধাপে কর্মসূচি ঠিক করা আছে। তবে সামনে বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস। সে বিষয়গুলোও আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। তাছাড়া সিনিয়র নেতারাও বসবেন। তারা বসেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, সিনিয়র নেতারা ও নীতি নির্ধারকরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমি মনে করি আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। সরকার বা আদালত খালেদা জিয়াকে অতি সহজে মুক্তি দেবে না। কারণ যেখানে মামলায়ই হয় না সেখানে মামলা হয়েছে, সাজাও হয়েছে। আর সরকার যখন সাজা দিয়েছে তারা মুক্তি দেবে না। তাই আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে হবে।

আবদুস সালাম বলেন, আর একটা দিক হলো সরকার বার বার জামিনে বাধা দেওয়ায় জনগণের ভেতরে খালেদা জিয়ার জন্য সহানুভূতি বাড়ছে। এটা সরকারের জন্য মঙ্গলজনক নয়।

আইনজীবীদের মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন কেবল দুই মামলায় জামিন পেলে তিনি কারামুক্ত হতে পারবেন। একটি হলো ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা। যেটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। অপরটি হলো জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা। যে মামলায় সাত বছরের দণ্ড হয়েছে। মামলাটির হাইকোর্ট বিভাগে আপিল বিচারাধীন। বৃহস্পতিবার এ মামলায় তার জামিন আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ  করেন।  

অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারাঅধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকারবিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।

একইসঙ্গে খালেদার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই থেকে কারাবন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। পরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া আপিল  করেন। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকও আবেদন করেন।

খালেদা জিয়া, অন্য আসামিদের আপিল এবং দুদকের আবেদনের শুনানি শেষে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। বাকীদের সাজা বহাল রাখেন।

হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৪ মার্চ আপিল বিভাগে আপিল করেন খালেদা জিয়া। এ আবেদনের সঙ্গে জামিনও চেয়েছেন খালেদা জিয়া। যেটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
 
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট
গত ২৯ অক্টোবর পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।  

একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।  

এর বিরুদ্ধে গত ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করা হয়।

উপস্থাপনের পর গত ৩০ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেন। এরপর ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
 
পরে ১১ সেপ্টেম্বর ফের জামিন আবেদন ফেরত দেন বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে আপিল বিভাগে  জামিন আবেদন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
এমএইচ/ইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।