ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

বিকিকিনিতে চাঙা মেলার প্যাভিলিয়নগুলো

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
বিকিকিনিতে চাঙা মেলার প্যাভিলিয়নগুলো ছবি: শাকিল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে বইমেলা থেকে: একুশে বইমেলায় এবার ছোট-বড় সব প্রকাশনীতেই বিকিকিনি শুরু থেকে ভালো। তবে অনেকটা এগিয়ে বড় প্রকাশনীগুলো।

বিশেষ করে যারা প্যাভিলিয়ন পেয়েছে।

বৃহস্পতির (১৮ ফেব্রুয়ারি) পড়ন্ত বিকেল থেকে রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত পর্যন্ত মেলার ‘বৃহস্পতি’-ও ছিল তুঙ্গে। গেলো বছর সেভাবে লাভের মুখ না দেখলেও এবার মন্দা কাটিয়ে আশার আলো দেখছেন প্রকাশকরা। ছোট-বড় সব প্রকাশনীতেই বিক্রি ভালো। তবে সৌন্দর্য, ভিড় আর বিক্রিবাট্টায় মেলার ১৩টি প্যাভিলিয়নের গুরুত্ব একটু আলাদাই।

বড় প্রকাশনীগুলোই পায় প্যাভিলিয়ন। এবার মেলার ১৩টি প্যাভিলিয়নে শুরুর দিন থেকেই কাটতি ভালো। শেষের দিকে বিক্রি বাড়ছে আরও।

মেলার ২২তম দিন সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মেলা ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয় কবি
আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখন বিক্রি হবে। তুমি-আমি-সবাই এটা আশা করতেই পারি। বড় কথা মেলার অতীতও তাই বলে। এখন যারা আসবেন তারা কিনতেই আসবেন।

তিনি বলেন, ঘোরার দিন শেষ। বর্তমানে শেষ সময়ে কেনাকাটাই মুখ্য। আর বড় বড় প্রকাশনীগুলোতে ভিড়-বিক্রি বেশি। কারণ তাদের সংগ্রহে মানুষ জনপ্রিয়তা খুঁজে পায়, এটি একটি বিষয়।

সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে সেই একই সুরে বলেন, যার ভালো বই থাকবে, তার বিক্রি এমনিতেই বেশি হবে- এটাই স্বাভাবিক। আর স্টল সাজানো বা বড় করে প্যাভিলিয়নের ( ৩ নম্বর প্যাভিলিয়ন) নকশাটা বিক্রির জন্য সুবিধার। এতে পাঠকরা ভালো করে বই দেখে কিনতে পারেন।

অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়ন (প্যাভিলিয়ন নম্বর ৬)  সাজানো হয় কর্ণধার মাজহারুল ইসলামের নকশায়। গেলোবার শাকুর মজিদের মূল নকশাকে একটু নতুনভাবে এনে স্টল তৈরি করা হয়েছে বলে জানান, ব্যবস্থাপক তুষার খান তুহিন। অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়ন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের খণ্ড এবং ছবির আদলে গড়া। তাদের সর্বাধিক বিক্রিও হুমায়ূনের তিন বই। হুমায়ূনের জনপ্রিয়তাকে কেন্দ্র করে পাঠক টানার চেষ্টা সাজসজ্জাতেও। হুমায়ূনের দেয়াল উপন্যাসটি এবারও তাদের শীর্ষ বিক্রিতে।

পাঞ্জেরীর ৯ নম্বর প্যাভেলিয়নটি কমিকস চরিত্রের ধাঁচে তৈরি। নকশা হয়েছে নিজস্ব ডিজাইন বিভাগ থেকে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শিশু-কিশোররা আমাদের টার্গেট পাঠক। শাহরিয়ার খানের ‘বেসিক আলী’ বইটির কাটতি এবার খুব। বেসিক আলী ঘরানার কমিকসের প্রতিচ্ছবি আমাদের প্যাভিলিয়ন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি যার যার পাঠক টানার পদ্ধতি বলতে পারেন।

তিনি জানান, শুক্র-শনি-রোববারে বিক্রি ২০ লাখের কাছাকাছি গিয়েছে।

১৩ নম্বর প্যাভিলিয়নটি অনন্যার। এর কর্ণধার মনিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সূচনা ডেভেলপারের স্থাপতি আকিল আখতার চৌধুরী আমাদের প্যাভিলিয়নের নকশাকার। সব বয়সীদের আকৃষ্ট করে এমন একটি সুন্দর প্যাভিলিয়ন তৈরি ছিলো আমাদের লক্ষ্য।

প্যাভিলিয়ন মেলার শোভাবর্ধনে অনন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বড় প্রকাশনাগুলোই প্যাভিলিয়ন পায়। তাদের পাঠকও বেশি। সৌন্দর্যবর্ধনে তাদের দায়ও বেশি।

অনন্যা থেকে এবার ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস ‘জিন্দাবাহার’ দারুণ চলছে বলেও জানান মনিরুল।

কাকলীর ১২ নম্বর প্যাভিলিয়ন সেজেছে একটু সাদামাটাভাবেই। উল্লেখযোগ্য বইয়ের ব্যানারে ঢাকা চারপাশ। প্রকাশনীর কর্ণধার এ কে নাসির বাংলানিউজকে বলেন, খোলামেলা করে প্যাভিলিয়ন করা হয়েছে, যাতে মানুষ বই দেখতে পারেন শান্তিমতো।

নজর কাড়ে অন্বেষার ২ নম্বর প্যাভিলিয়নও। তারা সোহরাওয়ার্দীর প্রথম অংশে পসরা সাজিয়েছে। এর কর্ণধার মোহাম্মাদ শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে ভিড় সবসময়ই থাকে। মূল ধারার প্রকাশনা হওয়াতে পাঠকের নজর রয়েছে অন্বেষায়। আর বই সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্যাভিলিয়ন জরুরি একটি বিষয়। যারা প্যাভিলিয়ন পায় তাদের সে নিয়মনীতি মানা বাঞ্ছনীয়।

এছাড়া গাছপালায় ঘেরা ৭ নম্বর প্যাভিলিয়ন করেছে পাঠক সমাবেশ। চারদিকে তারা ইট দিয়ে দেয়ালও তৈরি করে ফেলেছে। বিক্রির দিক দিয়ে মেলায় তাদের অবস্থানও প্রথম দিকে। জানান, অন্যতম কর্ণধার শামস শুভ্র।

১১ নম্বর প্যাভিলিয়নে আগামী রয়েছে সোহরাওয়ার্দীর ঠিক মধ্যখানে। তাদের বিক্রি বরাবরের মতো এবারও ভালো। বেশি চলছে শেখ হাসিনার লেখা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইটি।

এছাড়াও বাকি প্যাভিলিয়নগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাহিত্যপ্রকাশ (১০ নম্বর) গ্রামীণ আদল দিয়েছে। দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (৮ নম্বর), প্রবন্ধের মূল প্রকাশনা মওলা ব্রাদার্স (৫ নম্বর), অনুপম (১৪ নম্বর)। এছাড়া বাংলা একাডেমির দু’টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।

ব্যবসা বা ভিড়ের দিক থেকে চার ইউনিটের বড় স্টলগুলোও পিছিয়ে নেই। যার মধ্যে নবযুগ প্রকাশনী, শোভা প্রকাশনী, বিশ্বসাহিত্য ভবন, প্রথমা, অনিন্দ্য প্রকাশ, পার্ল পাবলিকেশন, জার্নিম্যান, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, শিখা প্রকাশনী, উৎস প্রকাশন ও তাম্রলিপির অবস্থা ভালোর তালিকায়।

বাংলা একাডেমি থেকে জানা যায়, প্যাভিলিয়ন যারা পান তারা বড় প্রকাশনা ও প্রতিষ্ঠিত কিনা- এ বিষয়টি দেখা হয়। এবছর ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একাডেমির কমিটি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিয়েছে। প্যাভিলিয়নের আনেকটি বড় দিক মেলার সৌন্দর্যবর্ধন। ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় প্যাভিলিয়ন আর ৬৯ হাজার টাকায় চার ইউনিট মেলে।

এদিকে, সোমবার মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়, যা চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। ইতোমধ্যে বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে শুরু হয়েছে ‘শাহ্ আবদুল করিম জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আবুল হাসান চৌধুরী। আলোচনায় রয়েছেন ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, শরদিন্দু ভট্টাচার্য, সাইমন জাকারিয়া। সভাপতিত্বে অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
আইএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।