ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (০১ জুন) উত্থাপিত এ বাজেট প্রস্তাবের নানা দিক নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী।
বাজেটের ধরন নিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা দুই ধরনের সরকারের কথা বলি। একটা আর্থিক সরকার আরেকটা রাজস্ব সরকার। এটা তো পার্লামেন্টের বিষয়। এটা রাজস্ব বাজেট। রাজস্ব সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জনপ্রিয়তা অর্জন করা, বাজেট যতটা ভালো দেওয়া যায়, জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায়, সেটা প্রতিটি সরকারেরই লক্ষ্য থাকে। সেই লক্ষ্যটাই এ বাজেটে প্রতীয়মান। কারণ আমরা দেশের অর্থনীতির অবস্থাতেই থাকুক, বাজেট বাড়ানোর একটা প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। যেটা ১১-১২ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। এ বৃদ্ধিগুলো সম্ভব কি না, সম্ভব হলে কোন দিক থেকে সম্ভব, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
বাজেটে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ কী- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বাজেটে ২ লাখ কোটি টাকা ঘাটতি ধরা হয়েছে। ঘাটতি অর্থায়ন করতে গিয়ে সরকার কোথা থেকে অর্থায়ন করবে, সেটা বড় বিষয়। আমরা যদি বাইরে থেকে করি, তাহলে খরচ অনেক বেশি, কারণ ডলারের দাম বেশি। আমাদের ২৭ ভাগ ডেবট সার্ভিসিং কস্ট (Debt servicing costs) গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়ে গেছে। এটি কিন্তু অনেক বেশি। আবার সরকার অর্থায়ন করবে ব্যাংক থেকে। ব্যাংক থেকে সরকার যখন অর্থায়ন করে, তখন আবার আমাদের প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্টটা মানে, ব্যক্তিগত বিনিয়োগের খাতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জায়গায় একটা চ্যালেঞ্জ থাকবে।
সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার যখন এ উৎস থেকে সংগ্রহ করতে গিয়ে আরেকটু থমকে যাবে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা প্রিন্ট করবে। তখন মুদ্রাস্ফীতির একটা চাপ থাকতে পারে। সরকার সেটা কন্ট্রোল করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ম্যাকানিজমের (পন্থা) কথা বলেছে, সরকারের উদ্দেশ্য ভালো। কিন্তু সরকারের চ্যালেঞ্জ থাকবে বলে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির এ প্রেসারটা। এত বড় ঘাটতি অর্থায়ন থাকলে মানি প্রিন্টিং (টাকা ছাপানো) ছাড়া পূরণ করা কঠিন। সেক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা বলা হয়েছে সেটা ৬ ভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। এটা কমানোটা একটা চ্যালেঞ্জ।
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও চ্যালেঞ্জের মুখে থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে এবং অন্যান্য দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেশি থাকে, তাহলে কাঁচামালের দাম অনেক বেশি থাকবে। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন সামগ্রীর দাম হাই থাকবে। আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যগুলোরও দাম কমানো অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীফির টার্গেট নিয়ে প্রবলেম। আরেকটি বিষয় হলো যখন কাঁচামালের দাম বেড়ে যায়, তখন উৎপাদন একটু স্তিমিত হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটু চ্যালেঞ্জ হবে।
সরকারের করণীয় সম্পর্কে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার রাজস্ব খাতে সংস্কারের কথা বলেছে এবং সঠিকভাবে যদি যোগ্যদের করের আওতায় নিয়ে আসতে পারে, তাহলে সরকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবে বলেই আমি মনে করি। এটা নির্ভর করবে সরকারের পদক্ষেপের ওপর।
বাজেটে নির্বাচনের একটা প্রভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি সরকারই নির্বাচনী বাজেট বাড়ায়। এখানেও তার প্রতিফলন রয়েছে। আমাদের রেমিট্যান্সের যে চ্যালেঞ্জটা রয়েছে, সেটি যাতে যথাযথ পন্থায় আনা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। তাহলে ফরেন রেমিট্যান্সের প্রেসার কমানো সম্ভব। অপরদিকে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে তৈরি পোশাক শিল্পে (আরএমজি) অর্ডার কমে যাচ্ছে। কিন্তু অর্ডারের পরিমাণ স্থিতিশীল রাখার জন্য নতুন মার্কেট খোঁজার ওপর জোর দিতে হবে। এ জায়গায় সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রদর্শনী হলো। জাপানে নতুন মার্কেট হচ্ছে ও ভারতে রপ্তানি বাড়ছে। সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হলে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২৩
এসকেবি/এসআই