ঢাকা: কৃষিখাত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি খাত। বড় খাত হয়েও বাজেটে অগ্রাধিকার পায় না।
শুক্রবার (২২ মে) রাজধানীর মুক্তিভবনে ‘আসন্ন বাজেটে কৃষি-কৃষক ও খেতমজুরের স্বার্থ রক্ষা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এ মত দেন তারা।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতি, সমাজতান্ত্রিক খেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট যৌথভাবে এর আয়োজন করে।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরকার প্রতিবছর বলে বাজেটে বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কৃষিখাত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি খাত। অথচ প্রতিবছর বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়। এ খাতের টাকা নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করা হয়।
তিনি বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের অর্ধেকের বেশি মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে চলে যাচ্ছে। কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে কৃষিখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, কৃষি, পোশাক ও জনশক্তির জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে।
এরপরও এ তিনটি খাত বাজেট উপেক্ষিত ও রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার শিকার। ধানের দাম কমে যাওয়াতে গ্রামীণ অর্থনীতি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের ইন্টারেস্ট গ্রুপের কারণে চাল আমদানি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ধানের ওপর।
তিনি বলেন, ভারতে প্রতি তিনবছর পরপর গুদাম খালি করার জন্য কম দামে বাংলাদেশে চাল রপ্তানি করে। ফলে বাংলাদেশে ধান, চাল ও অকৃষি পণ্যে প্রভাব পড়ে।
কৃষক ও কৃষিকে কীভাবে বাঁচানো যায় এজন্য অর্থমন্ত্রী কখনো কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা না করায় অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাজেটের আকার বাড়লেও কৃষিতে বরাদ্দ বাড়েনি। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ফলে কৃষিতে বরাদ্দ কমেছে। কৃষিতে বরাদ্দের ৭০-৭৫ শতাংশ ভর্তুকি। এর বাইরে তেমন বরাদ্দ নেই।
বাজেটে চাল ছাড়াও অন্য কৃষিপণ্যে ভর্তুকি, উৎপাদনে স্থিতিশীলতা অর্জনে পরিকল্পনা ও কৃষিতে বরাদ্দ বাড়ানোর পক্ষে মত দেন তিনি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, কৃষিতে সরকার ও বিআইডিএসর তথ্যে যে গরমিল রয়েছে তা দূর করা দরকার। খাদ্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে খাদ্য আমদানি করছি কেন? তবে প্রধান প্রধান খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে অন্যগুলোতে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ হ্রাস, ব্যয় সংকুচিত ও অপরিকল্পিতভাবে খাদ্য আমদানি ও উৎপাদন করাই কৃষিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বাজেটে কৃষিতে প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। কৃষিতে স্থবিরতা কাটাতে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার পরামর্শ দেন তিনি।
বিআইডিএসর গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, বাংলাদেশের কৃষিখাতে সমস্যা থাকলেও বাজেটে তা সেভাবে গুরুত্ব পায় না। কৃষি শ্রম মজুরি নিয়ে বাজেটে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা দরকার। কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি।
কৃষি ভর্তুকির টাকা কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি দেওয়া, আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নীতি প্রণয়ন ও কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৫
আরইউ/এএ