ঢাকা: জাতীয় বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি নিতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করতে হয় সরকারকে। এরমধ্যে বাজেটোত্তর ভুরিভোজেই যায় অর্ধকোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাজেটোত্তর ভুরিভোজ প্রথা বন্ধ করার বিষয়টি সামনে এসেছিলো ২০০৯-১০ বাজেটের সময়। তার মাস দেড়েক আগে ২১ মে আইলা বয়ে যায়। এতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ১৯৫ জন লোক মারা যান। বিপুল পরিমাণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তখন বাজেট পরবর্তী ডিনার বাতিল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে নানা মতের কাছে পরাজিত হন অর্থমন্ত্রী। অব্যাহত থাকে বাজেট ডিনার।
বাজেট ডিনার ঠিক কোন বছর থেকে চালু হয়েছে নির্দিষ্ট করে তার দিনক্ষণ জানা যায়নি। অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান আমল থেকেই এই রেওয়াজ চলে আসছে। তবে প্রথম দিকে এর পরিসর অনেক ছোট ছিলো। মূলত বাজেট পাশের পরে সংসদ সদস্যদের জন্য এই ডিনার প্রথা চালু ছিল।
কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেকে এর আকার বাড়তে থাকে। ধাপে ধাপে যুক্ত হয় সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ। গত বছর এই ডিনার পার্টিতে ব্যয় হয় ৪০ লাখ টাকা। এ বছর এ ব্যয় অর্ধ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাজেটের প্রস্তুতি পর্বে ডিনার ছাড়াও নানান খাতে অর্থ ব্যয় হয়। এরমধ্যে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের (উপ-সচিব থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত) একটি বোনাস দেয় অর্থ বিভাগ। অন্যান্য খাতের ব্যয় পরিশোধ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তর।
বাজেট বুক প্রণয়নে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। অর্থ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাজেটের বিভিন্ন বই বিভিন্ন সংখ্যায় ছাপানো হয়। এর মধ্যে বাজেট বক্তৃতার বইয়ের সংখ্যাই বেশি। সব মিলে ছাপানো হয় প্রায় চার হাজার সেট। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজার ব্যাগ বিতরণ করা হয়। বাকিগুলো অফিস কপি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।
জাতীয় সংসদে সরবরাহ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, বেসরকারি সংস্থা, সংবাদমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। ছাপানোর কাজ করে থাকে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (বিজি প্রেস)। এই ব্যয় বিজি প্রেসের বার্ষিক ব্যয়ের খাতে যুক্ত।
বিভিন্ন সময়ে অর্থ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী বাজেট বই ছাপা হয় বলে জানান বিজি প্রেসের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম। নির্দিষ্ট সংখ্যা ও বাজেট জানাতে চাননি তিনি।
বিজি প্রেসের মহাপরিচালক এ কে এম মানজুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন দফায় ছাপানোর কাজ এগিয়ে চলছে।
অন্যদিকে বাজেট অধিবেশনের ব্যয় জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের খাত থেকে পরিশোধ করা হয়। ২০১৪-১৫ বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছিলো ৩ জুন, বাজেট পাশ হয় ২৯ জুন। বাজেটের উপর আলোচনা হয় ৬০ ঘণ্টা। টিআইবির হিসেবে, সংসদ অধিবেশনে প্রতি মিনিটে ব্যয় হয় ৭৮ হাজার টাকা। সে হিসেবে বাজেট আলোচনায় ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ কোটি ৮ লাখ টাকা।
২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করা হবে ৪ জুন। যথারীতি শেষ সপ্তাহে গিয়ে বাজেট অনুমোদন হবে। আর বাজেট অনুমোদনের পরদিন বাজেট ডিনারের জোর প্রস্তুতি চলছে।
বাজেট সন্তোষজনক গতিতে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব (বাজেট শাখা) সাহাবুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সঠিক সময়ের রয়েছেন বাজেট প্রণয়নের কাজ। ক্ষেত্রবিশেষে টাইম ফ্রেমের চেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিলো ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেট আকার ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
এসআই/জেডএম