ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

বাজেট লই হামার কাম নাই?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৭ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৬
বাজেট লই হামার কাম নাই? ছবি: দীপু-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘বাজেট লই হ‍ামার কাম নাই?  শুধু বাজেট বাজেট করেন মিয়্যা। যান অন্য দিকে, আমাগো এ্যাতো হময় ন্যাই’।

এই সময় না থাকা মানুষটির নাম আনোয়ার হোসেন। বাজেট সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই সমাজের এই প্রান্তিক মানুষটির। আর নেই বলেই বাজেট নিয়ে আগ্রহ একেবারেই কম তার।

বৃহস্পতিবার (২ জুন) ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর রাতের রাজধানী ঘুরে এমন আরো কয়েকজন বাজেট কম বুঝা লোকের দেখা পাওয়া গেলো। এদেরই একজন আনোয়‍ার। দিনগত রাত দেড়টায় তেজতুরি পাড়ার ওভার ব্রিজের নিচে রাস্তায় সাইকেল-রিকশার এই মেকানিকের সঙ্গে দেখা।  
 
বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা বাজেট টাজেট বুঝি না। দিন আনি দিন খাই। কাম করলে দুই বেলা পেটে ভাত যায়, নয়তো না খেয়ে আমাগো মরতে হয়। দুই মাইয়ারে এহনো বিয়া দিতে পারি নাই।

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি শুধু এই রাতের বেলাতেই ফার্মগেটের তেজতুরি পাড়ায় ফুটপাতের উপর রিকশা ও ভ্যানগাড়ি মেরামতের খুচরা কাজ করেন তিনি।
 

মো: মিজান মিয়া। কারওয়ান বাজার কাঁচা বাজারে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে তার চায়ের দোকান। আগে দিনে চা-পান বিক্রি করতেন, কিন্তু এখন শুধু রাতে চা-পান বিক্রি করেন। পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মিজান মিয়ার ৩ ছেলে ১ মেয়ে। সবাই পড়ালেখা করে। ১৩ মাস আগে প্রিয় স্ত্রী মারা গেছেন।
 
বাজেট সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন। আমরা কি বাজেট বুঝি? যারা বাজেট করে তাদেরকে বলেন?
 
তিনি বলেন, মানষের দ্বারে শুনি বাজেট হলে জিনিস পত্রের দাম বাড়ে। কাল থেকে না খেয়ে থাকতে হবে। সব কিছুর দাম বাড়লে আমরা কার কাছে যাব, বলেন চাঁদপুরের মিজান মিয়া।
 
 কারওয়ানবাজারে সবজি বেচেন সত্তরোর্ধ ইসমাইল হোসেন। ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা প্রতিদিন লাভ হয় সবজি বেচে। ৪ ছেলে ২ মেয়ে ইসমাইল হোসেনের। ৩ ছেলেকে এই সবজি বিক্রি করেই তিনি সাদি দিয়েছেন। আর এক মেয়েকে কিছুদিন আগে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি ১ ছেলে ও ১ মেয়েকে তিনি পড়ালেখা করাচ্ছেন।
 
তিনি বলেন, আর কয়দিনই বা বাঁচুম। পোলাপান দুইডারে বিয়্যা দিতে পারলে মুই বাঁচি। হোনেন মিয়্যা, বাজেট লইয়্যা হিন্তা করার হময় নাই। এখন হময় নাই, পরে অ্যাইসেন কথা কমুনে।
রহমান। রাজধানী ঢাকাতে ১৫ বছর ধরে রিকশা চালান। বাড়ি শেরপুরের নলিতাবাড়ি। একটি ছেলে আছে তার। ছেলেকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তাইতো কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠান ছেলের পড়ালেখার জন্য।
 
বাজেট সম্পর্কে বৃহস্পতিবার (২ জুন) দিনগত রাত আড়াইটায় শাহবাগ এলাকায কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, শুনি বাজেট হয়। সবাই বাজেট নিয়া আলোচনা করে। চারদিকে বাজেটের তুফান ছোটে। আর আমরা না খেয়ে মরলেও কেউ দেখে না। দুই টাকা বেশি ভাড়া চাইলেই কারো মুখের দিকে তাকানো যায় না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৩ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৬
এসজে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।