ঢাকা, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বাজেট

শিশুর ওপর বাজেটের হানা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৭
শিশুর ওপর বাজেটের হানা! শিশুর ওপর বাজেটের হানা!

ঢাকা: গুঁড়ো দুধ, মিষ্টি বিস্কুট, পাস্তা, ওয়েফার, পটেটো চিপস, চকলেট, আইসক্রিম, জ্যাম, জেলি, ফলের রস, ফ্রুট ড্রিংক, আপেল, আঙুর, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই, হট ডগ, পিৎজা এবং শিশুদের জন্য তৈরি পোশাক।

তালিকাটিতে নজর দিলে বোঝা যাবে এগুলো সবই শিশু পণ্য। কোনোটি ওদের প্রিয় খাবার, কোনোটি স্কুলের টিফিন, কোনোটি আবার বেড়ে ওঠার জন্য অতি প্রয়োজনীয়।

 শিশুর বায়না ধরাতেও এসবই থাকে।

এবারের বাজেটে এই সবগুলোরই দাম বাড়ছে। যাতে উদ্বিগ্ন শিশুর মায়েরা। বাজেট প্রস্তাব পেশের পর-পরই মায়েদের প্রতিক্রিয়া জানা গেলো।

রাজধানীর ইস্কাটনের এক মা শিরিন জাহান। তার দুই সন্তান স্কুল-কলেজে যায়। বাজেটে শিশুদের বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার কথা শুনে বললেন, এসব শুনে তো মনে হচ্ছে শিশুদের ওপর হানা দিয়েছে এবারের বাজেট।  

এই মা মনে করেন, শিশুদের খাদ্যের দাম বাড়ানো নয়, উল্টো পুষ্টি ও তাদের বিকাশের জন্য বাজেটে ছাড় থাকা প্রয়োজন।  

দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই পরিবারিক বাজেটে শিশুদের খাদ্য কেনায় প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

গুঁড়ো দুধ শিশুর জন্য অতি প্রয়োজনীয়। চিপস, বিস্কুট, দুই-একটা ফার্স্ট ফুড এগুলো বাচ্চাদের স্কুলের টিফিনে দেওয়া হয়। বাচ্চারা এগুলো খেতেও পছন্দ করে। এসবের দাম বাড়ানো সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ। এতে শিশুদের চাহিদা মেটানো অনেকাংশেই সম্ভব হবে না। অনেক নিম্ন, মধ্যবিত্ত পরিবার ঝামেলায় পড়বে, বলেন শিরিন জাহান।

বৃহস্পতিবার (০১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
 মা ও শিশু, ছবি: বাংলানউজ (ফাইল ছবি)প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু পণ্য ও সেবা আমদানিতে শুল্ক (সিডি), সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বাড়ানো হয়েছে। এতে ওইসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এর অনেকগুলো পণ্যই শিশু সংশ্লিষ্ট। যেমন: গুঁড়ো দুধ, মিষ্টি বিস্কুট, পাস্তা, ওয়েফার, পটেটো চিপস, আইসক্রিম, চকলেট, জ্যাম, জেলি, ফলের রস, ফ্রুট ড্রিংক, আপেল, আঙুর, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই, হট ডগ, পিৎজা। এছাড়া শিশুদের সবরকম তৈরি পোশাকের দামও বাড়ছে।

শিশুদের আবশ্যিক খাদ্যে দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বেসরকারি সংস্থা রামরুর রিসার্চ ফেলো অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, এতে করে বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর ক্রয় ক্ষমতায় আঘাত লাগবে। কারণ মাথাপিছু আয় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের এক নয়; এটা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে।

পাশাপাশি তিনি শিশু খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব তুলে ধরেন। বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের সুস্থতার জন্যই সরকারের উচিত মানসম্মত শিশু খাদ্যের নিশ্চয়তা দেওয়া।

একটি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মেহজাবীন বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই সুযোগ পেলে দুধের দাম বেড়ে যায়। এখন তো আরও সুযোগ করে দেওয়া হলো। ল্যাকটোজেনের দাম যদি আরও বাড়ে তবে সাধারণ মানুষ কি শুধু শিশু খাদ্যেই তার পারিবারিক বাজেটের পুরোটা ঢেলে দেবে! আমরা তো বুঝি একটি শিশুকে তার সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করা কতটা কঠিন!

সরকার গত কয়েক অর্থবছর ধরে শিশু বাজেট ঘোষণা করছে, এবার অন্তত ১৫টি মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু তাদের সার্বিক উন্নয়নের কথা সরকার ভাবছে না বলেই শিশু খাদ্যের বাড়ছে দাম, মত দেন তিনি।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী খরচ বাড়বে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়তে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রস্তাবিত বাজেটে এখানকার ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। এতেও শিশুদের ওপরই চাপছে বোঝা! চিন্তায় অভিভাবকরা।

বর্তমানে ইংরেজি স্কুলে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। ভ্যাট হার একক করায় এখন থেকে এক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হবে। ফলে খরচ বাড়বে এসব স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর টিউশন ফি’র ক্ষেত্রে।

এই ভ্যাট বৃদ্ধিও শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলবে। অনেক বাবা-মা’ই সাধ থাকা সত্ত্বেও তাদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে পারবেন না। যা ক্ষতিগ্রস্ত করবে আগামীর ভবিষ্যত শিশুকেই।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৭
আইএ/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।