ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধিতে উন্নয়নের কোনো সর্ম্পক নাই: সিপিডি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৯
সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধিতে উন্নয়নের কোনো সর্ম্পক নাই: সিপিডি

ঢাকা: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এখন আমাদের পুরো উন্নয়ন কর্মসূচি দাঁড়িয়েছে সরকারি টাকায় অবকাঠামো তৈরি করে প্রবৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। এটি একটি প্রাগৈতিহাসিক ধারণা। বর্তমানের অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের চিন্তার সঙ্গে এর কোনো সর্ম্পক নাই। 

শুক্রবার (১৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০ পেশ পরবর্তী পর্যালোচনায় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।  

তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে কিন্তু বাংলাদেশের গরীব মানুষের ভেতরে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে বাড়ছে না।

এমনকি ব্যক্তি বিনিয়োগও বাড়ছে না। এটার ফলে আমাদের সামাজিক সক্ষমতার উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। আয় বৈষম্য বাড়ছে। ধনী-গরীবের বৈষম্য বাড়ছে। এমনকি ভোগের বৈষম্যও বাড়ছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈষম্যগুলো আরও প্রকট হচ্ছে। এটা কোনো টেকসই ব্যবস্থা না।  

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটের স্বচ্ছতার সবচেয়ে বড় জায়গাটি হলো অর্থমন্ত্রী কর সর্ম্পকে যেসব তথ্য ব্যবহার করেছেন সেগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উৎস থেকে এসেছে। আমরা বার বার বলেছিলাম জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যের সঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের তথ্যের গরমিল রয়েছে।  

তিনি বলেন, এ পার্থক্য প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার তথ্যের। রাজস্ব বোর্ডের তথ্য ব্যবহার করলে হারগুলো অনেক ভালো দেখা যায়, অর্থমন্ত্রণালয়ের তথ্য ব্যবহার করলেও সেই হার অনেক কম দেখাবে। অর্থমন্ত্রী বিচক্ষণতার সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের তথ্যই ব্যবহার করেছেন।  

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার যখন কোনো প্রতিষ্ঠানকে কর ছাড় দেয় অথবা নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানে করারোপ করে। সেটা অবশ্যই ঘোষণা দিয়ে জানাতে হবে। সেটা হলো কি পরিমাণ কর কাকে ছাড় দিলেন। কোনো প্রতিষ্ঠানে কত কর আরোপ করলেন। এই স্বচ্ছতা না থাকলে বাজেট কিন্তু স্বচ্ছ হলো না। এই স্বচ্ছতা আমরা পাই না।  

তিনি আরও বলেন, এই স্বচ্ছতা শাহ এমএস কিবরিয়া, এম সাইফুর রহমানের আমলে ছিল। তারপরে কেমন কেমন করে যেন উঠে গেছে। অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ থাকলো বাজেট স্বচ্ছতার অংশ হিসেবে এ জায়গাটা আবার ফিরিয়ে আনতে।  

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেট বক্তৃতায় আমরা কিছু অসামঞ্জস্য পেয়েছি। যেমন এক চেটিয়া উৎসে কর কাটা হবে। এই করের স্তরগুলো কি হবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। বাজেট বক্তৃতায় আছে ২৫ লাখ টাকা, রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে আছে ১৫ লাখ টাকা। একটি বিভ্রান্তি রয়েছে।  

আমরা বলতে চাই তথ্য উপাত্তে সামঞ্জ্য ও স্বচ্ছতা নিয়ে আসেন। বিভাজিত তথ্য দিতে হবে। নারীদের জন্য কি দিলেন, শিশুদের জন্য কি দিলেন। সব বিষয়ে পরিস্কার করে বিভাজিত তথ্য দিতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিক পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারের যে চাপ রয়েছে, সেই চাপটা সরকারের বাজেট বক্তৃতায় নাই। যেহেতু সমস্যাটিরই কোনো স্বীকৃতি নাই, সেহেতু সরকার কোনো অভিনব কৌশল খোঁজেনি। মুদ্রানীত, বাণিজ্যনীতি বা ভর্তুকির ভেতের সেই ধরনের অভিনবত্ব নাই। বাজেট উপস্থাপনে অর্থমন্ত্রী যে অভিনবত্ব দেখিয়েছেন, বাজেট প্রস্তুত ও প্রস্তাবনায় সেই অভিনবত্ব নাই।  

আমরা বার বার বলছি, কোন কোন খাতে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, কোন খাতে প্রতিশ্রুতি প্রতিপালিত হয়নি। এসব বিষয় ধরে বাজেট প্রস্তুত করা হয়নি। গদবাধা কিছু ভালো কথা থাকে সেগুলো আছে। আবার তিন কোটি কর্মসংস্থানের কথা বলা হলেও কোন খাতে, কোন বছরে কত, তার কোনো প্রাক্কলন নাই।  

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এক কোটি পর্যন্ত করদাতা হবে। কোন সালে কত হবে, কেমন করে হবে। কত আয় হবে তার কোনো কর্মসূচি নাই। এগুলোতে বাতাসের ভেতরে কিছু আশ্বাসের বাণী হয়তো গেছে। আমরা মনে করি না এগুলো বাস্তবভাবে সেরকম এসেছে।  

আমরা কিছু কাঠামোগত সংস্কারের কথা বলে এসেছি। ব্যাংকিং খাতের কথা পরিস্কার ভাবে বলেছি। এবিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়ে আবার সময় ক্ষেপনের জন্য আলোচনার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো।  

তিনি আরও বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২০১৩ সাল থেকে বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে যে স্থবিরতা আমরা দেখছি। এর বড় কারণ হলো আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, রাজস্ব কর্মসূচি, সাবসিডি ব্যবস্থাপনা, পাইকারি ও খুচরা মূল্যে বিভিন্ন পরিষেবার দাম এগুলোর ক্ষেত্রে কোনো সংস্কারের ভেতর যায়নি সরকার। পরিতাপের বিষয় এবারও সেই সংস্কার থেকে বঞ্চিত হলাম।  

অনুষ্ঠানে সিপিডির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট উম্মে শেফা রেজবানা, মোস্তফা আমির সাব্বিহ, সারাহ সাবিন খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

**বাজেটে উচ্চ আয়ের মানুষ বেশি সুবিধা পাবে
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৯
এসই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।