ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বাজেট

বাজেটে সিমেন্টের উৎপাদন খরচ বাড়বে বস্তাপ্রতি ৪২ টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৯
বাজেটে সিমেন্টের উৎপাদন খরচ বাড়বে বস্তাপ্রতি ৪২ টাকা বসুন্ধরা সিমেন্ট

ঢাকা: ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বিকল্প নেই সিমেন্টের। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো সুখবর নেই এ শিল্পের জন্য।
সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর ও ৩ শতাংশ হারে উৎসে আয়কর ধার্য করা হলে সিমেন্টের উৎপাদন খরচ (বস্তাপ্রতি) বেড়ে যাবে ৪২ টাকা। এতে সিমেন্টের বিক্রয়মূল্য বাড়লে বিঘ্নিত হবে দেশের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে অগ্রগতি।

আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে ভ্যাট আইন। এ আইনে সিমেন্ট খাতে যে করারোপ করা হয়েছে তাতে একদিকে যেমন আবাসনখাতে প্রভাব পড়বে, একই সঙ্গে সরকারের অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বাড়বে ব্যয়।

পাশাপাশি প্রস্তাবিত বাজেটে চাপে থাকা মধ্যবিত্তের বোঝা হিসেবে আরেকটি পণ্যের নাম যুক্ত হবে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাসনখাত চাঙা করার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা অনেকটাই বিফলে যাবে যদি অগ্রিম কর বা অ্যাডভান্স ট্যাক্স প্রত্যাহার করা না হয়। একইসঙ্গে বাড়বে ব্যক্তিগত গৃহনির্মাণ ব্যয়।  

এবারের বাজেটে অন্যতম বড় খাত অবকাঠামো উন্নয়ন। সিমেন্টের ব্যয় বাড়লে সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ও বাড়বে।
 
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান ও ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল খালেক বলেন, বর্তমানে সিমেন্ট সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট দিতে হয় ১৫ শতাংশ। আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করলে এ অতিরিক্ত ৫ শতাংশের জন্য ব্যাংকঋণ করতে হবে। ব্যাংকঋণের জন্য ব্যাংকের সুদের হার বাড়বে। এই অতিরিক্ত ৫ শতাংশ পরবর্তীতে সমন্বয় করা সম্ভব হবে না। কারণ এই শিল্পে শুধু গ্রান্ডিং ও মিস্কিং করা হয়। এটি শতভাগ কাচামাল আমদানিনির্ভর শিল্প।  

‘মূল্য সংযোজনের হার খুবই কম। ফলে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ আগাম কর সমন্বয়ের সুযোগ নেই। ফলে দেখা যায়, আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ, সরবরাহ পর্যায়ে ৩ শতাংশসহ মোট ৮ শতাংশ অগ্রিম করের দায় সমন্বয় করার জন্য ৩২ শতাংশ মোট মুনাফা করতে হবে।  এছাড়া ব্যাগপ্রতি দাম বাড়বে ৪২ টাকা। ’ 

শিল্পে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর ধার্য নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। সবধরনের আমদানি পণ্যে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম কর আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলে আমদানির আগেই ৫ শতাংশ কর দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এতে উৎপাদন ব্যয় বহুলাংশে বাড়বে। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে পণ্য। কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা ছাড়া এর সুফল মিলবে না। এই বিধানটি শুধুমাত্র সেই সব পণ্যের উপর রাখা উচিত, যে সব পণ্য বা কাঁচামাল এলে দেশের ক্ষতি হতে পারে। এটি বহাল থাকলে শিল্প উৎপাদন ব্যহত হবে।
বসুন্ধরা সিমেন্ট ও কিং ব্র্যান্ড সিমেন্ট
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি  অগ্রিম আয়কর (এটি) অতিরিক্ত ৫ শতাংশ। ফলে এখন মোট ২০ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এছাড়া আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা সি অনুসারে আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ উৎসে কর্তন করা অগ্রিম আয়কর ও স্থানীয় সরবরাহ পর্যায়ে ৩ শতাংশ উৎসে কর্তন করা অগ্রিম আয়কর ন্যূনতম আয়কর হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এ খাতে ট্যাক্স অন ট্যাক্স হয়ে যাবে। আর এর ফলেই প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে দাম বাড়বে ৪২ টাকা। কারণ ভ্যাট ও অগ্রিম করারোপ করার কারণে সিমেন্টের এক টন কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বাড়বে ৮৫০ টাকা। এক টনে ২০ ব্যাগ সিমেন্ট হয়। সে হিসেবেই প্রতিব্যাগ সিমেন্টে দাম ৪২ টাকা বাড়ে। তবে অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হলে এ খরচ কমে আসবে।  

সিমেন্টশিল্পে বছর বছর চাহিদা কিছুটা বাড়ছে। দেশের মোট সিমেন্ট ব্যবহারের ২৫ শতাংশ ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত বাড়ি নির্মাতারা। ৩৫ শতাংশ আবাসন ব্যবসায়ীরা। বাকি ৪০ শতাংশ সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হয়। সিমেন্টশিল্প মালিকদের হিসাবে, দেশের মোট সিমেন্ট উৎপাদনক্ষমতা বছরে তিন কোটি টন। উৎপাদন করা যায় এক কোটি ৮০ লাখ টন।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পদ্মাসেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ আবাসনখাতের সব প্রকল্পে দেশের উৎপাদিত সিমেন্ট সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে যে করারোপ করা হয়েছে তা বহাল থাকলে সিমেন্টের দাম বাড়বে। ফলে এসব বড় প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়বে। অর্থাৎ, শুধু ৫ শতাংশ অগ্রিম করারোপের কারণে সিমেন্ট শিল্পের পাশাপাশি আবাসনখাত ও সরকারের বড় প্রকল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সংশ্লিষ্টদের এ দাবির সঙ্গে অনেকটাই একমত পোষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবাসন খাতের মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন খাতের অন্যতম প্রধান খাত সিমেন্ট সেক্টরে অগ্রিম কর ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে প্রতিবস্তা সিমেন্টের দাম বাড়বে ৪২ টাকা। এতে আবাসনখাতে প্রভাব ফেলবে। যাতে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসনখাত চাঙা করার জন্য যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা থেকে আমরা বঞ্চিত হবো।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৯
এসই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।