ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ফের শৈত্যপ্রবাহ, শীতে কাঁপছে রাজশাহী

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
ফের শৈত্যপ্রবাহ, শীতে কাঁপছে রাজশাহী ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কম থাকায় এমনিতেই শীতের তীব্রতায় কাবু হয়ে পড়েছিল মানুষ। এর ওপর আজ শনিবার (৭ জানুয়ারি) থেকে আবারও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে।

ফলে শীতের ধকল কাটছে না রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে।

রোদহীন এ শহরে ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দুপুরের পর কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও তার নিরুত্তাপ আলো শীতার্ত মানুষের শরীরে উষ্ণতা ছড়াতে পারছে না। এমন বৈরি আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষ।

রাজশাহীর ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় মানুষের পাশাপাশি এখন পশু-পাখিরাও শীতে কষ্ট পাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া পূর্বাভাস বলছে, আরও কয়েক দিন রাজশাহীসহ সারাদেশে শীতের তীব্রতা এমন থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আর দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে।

অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে, রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে আজ শনিবার (৭ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এটিই চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজীব খান বাংলানিউজকে বলেন, ভোর ৬টার পর থেকে আর তাপমাত্রা কমেনি। ফলে এটিই আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন- এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।

এদিকে, ঘন কুয়াশার কারণে আজও সকাল ১১টা পর্যন্ত রাজশাহীতে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। ভোরে ঘন কুয়াশার কারণে প্রধান সড়কগুলোতে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। বেলা ১১টার পর মহানগরীতে সূর্যের দেখা মিলেছে। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকার কারণে এখন কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। হাড় কাঁপানো শীতে ছিন্নমূল মানুষ গুটিসুটি হয়ে পড়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা এখন ক্রমাগত বাড়ছে। কোল্ড ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে মানুষ হাসপাতালে আসছেন বেশি। এজন্য ইনডোর ও আউটডোরে শীতজনিত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।  

আর এমন ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিলে রাজশাহীর কৃষিতে ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ সময়টায় এসে কুয়াশার কারণে বরাবরই বোরো বীজতলা ও রবি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে জমির বোরোতে কোল্ড ইনজুরি ও আলুতে লেটব্লাইট (পচন) দেখা দেয়। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মাজদার হোসেন বলেন, এ বছর শুরু থেকেই রাজশাহীতে শীতের প্রকোপ বেশি। তবে শেষ সময়ে এমন বৈরি আবহাওয়া রবি শস্যের জন্য কাল হয়ে ওঠে। তাই কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্ক রয়েছেন। বর্তমানে জেলার পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছেন। কৃষকের মাঠের ফসলকে নিরাপদ রাখতে সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এছাড়া মোবাইল অ্যাপস ও হট লাইন নম্বরের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টাই কৃষি তথ্য সেবা পাচ্ছেন কৃষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৩
এসএস/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।