ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

টানা তাপপ্রবাহে রাজশাহীতে জনজীবন দুর্বিষহ, তাপমাত্রা ৩৯ এর ঘরে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
টানা তাপপ্রবাহে রাজশাহীতে জনজীবন দুর্বিষহ, তাপমাত্রা ৩৯ এর ঘরে

রাজশাহী: এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজশাহীর ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টানা তাপপ্রবাহে তাই রাজশাহী জনজীবন দুর্বিষহ উঠেছে।

ছেদ ঘটেছে স্বাভাবিক কাজকর্মেও। অফিস-আদালত বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান; কোথাও স্বস্তি নেই। বিশেষ করে পথে-ঘাটে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রুটি-রুজির তাগিদে আগুনমুখো আবহাওয়া উপেক্ষা করেই তাদেরকে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে যেতে হচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও নিদারুণ কষ্টে একেকটি উত্তপ্ত দিন পার করছে।

রাজশাহীতে তাপপ্রবাহের সাথে সাথে দুপুর গড়াতেই কমে যাচ্ছে বাতাসের আদ্রতাও। এর কারণে মানুষের শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। রোজা থাকার কারণে কেউ পানি পান করে সেই ঘাটতিও পূরণ করতে পারছেন না। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা বেশি কষ্ট ভোগ করছেন। এই কাঠফাটা গরমেও মানুষের ঠোট ফাটছে, হাত পাও ফেটে যাচ্ছে। এই অবস্থায় শিশু ও বৃদ্ধদের ছায়ায় থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া ইফতারের সময় ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমত পরিমাণে খেজুর খাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন।



রাজশাহীর বিশিষ্ট ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, এমন তাপপ্রবাহে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের বেশি সমস্যায় ভুগতে হয়। তাই শারীরিক সমস্যা থাকলে তাদের রোজা না থাকাই ভালো। আর যারা রোজা রাখতে পারছেন, তাদেরকে ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত বেশি পরিমাণে পানি ও পানীয় জাতীয় ফলমূল খেতে হবে। এছাড়া তেল ও চর্বি জাতীয় সব খাবার সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
এদিকে প্রথম দিকে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। তবে গত তিনদিন থেকে সেটি মাঝারি তাপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে আজ থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ তীব্র তাপপ্রবাহের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে হাহাকার পড়ে গেছে। তবে বৃষ্টির দেখা নেই।  

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বলছে, আগামী এক সপ্তাহ বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। উল্টো আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া বেশ কিছু বছরের রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বলছে, গত ৪ এপ্রিল থেকে মূলত রাজশাহীতে তাপপ্রবাহ শুরু হয়।  

এদিন রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ৯ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহী সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ অবস্থান করছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। এর মধ্যে ৯ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রি ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১১ এপ্রিলও রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ ১২ এপ্রিল বিকেল ৩টায় রাজশাহী সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এখন চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।



জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রেজওয়ানুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আপাতত আরও এক সপ্তাহ বৃষ্টি নামার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর বৃষ্টি ছাড়া এই তাপপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই তাপপ্রবাহ আরও বেশ কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং রাজশাহীর তাপমাত্রা এবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে।

সাধারণত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকেই তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বলা হয় মৃদু তাপপ্রবাহ। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ।

এছাড়া দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলেই তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয় বলেও উল্লেখ করেন রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণগারের ওই আবহাওয়া কর্মকর্তা।  

এছাড়া বৃষ্টি নিয়ে আপাতত কোনো সুখবর নেই আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছেও।

আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগসহ নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে যে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।