ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

কপ-২০

লিমায় হতাশা, দৃষ্টি প্যারিসে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪
লিমায় হতাশা, দৃষ্টি প্যারিসে

ঢাকা: লিমায় অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্পর্কিত ২০তম কনফারেন্স অব পার্টিস সম্মেলন (কপ-২০)-এর ফলাফলে হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটির বিশেষজ্ঞরা।

তবে কপ-২১-এর প্যারিস সম্মেলনে বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝঁকিতে থাকা দেশগুলোর লাভ হবে বলে তারা মন্তব্য করেছেন।



বুধবার বিকেলে ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিকের কার্যালয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট আয়োজিত ‘লিমা কপ-২০ আউটকাম ও প্যারিস সম্মেলনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ মন্তব্য করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, লিমার রেজাল্ট হলো- নো রেজাল্ট। সবকিছু প্যারিসের জন্য অপেক্ষা করছে।

তারা বলেন, লিমায় অনুষ্ঠেয় ২০তম জলবায়ু সম্মেলন ফলাফল, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। জলবায়ু পরির্তনের ফলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো যে ক্ষতির মুখে পড়েছে, তার ন্যায্যতা ও ক্ষতিপূরণ পেতে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল সেটি পারেনি দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।

এতে আরো বলা হয়, তবে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় আগামী সম্মেলনে প্রশমন, অভিযোজন, ন্যায্যতা ও জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রে যদি সরকার, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম একসঙ্গে কাজ করে, তাবে বাংলাদেশ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ড. আতিক রহমান বলেন, উন্নয়নশীল দেশের জন্য লিমায় অনুষ্ঠেয় কপ-২০ সম্মেলনের ফলাফল শূন্য। কেননা, এর ওপর ভিত্তি করে প্যারিস ন্যায়সঙ্গত চুক্তিগ্রহণ করতে ব্যর্থ হবে, যদি না কোনো ভালো পরিবর্তন গৃহীত হয়।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিমুল হক বলেন, লিমার সম্মেলনের নেতারা জলবায়ু পরির্তনে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। তারা শুধুমাত্র প্রশমনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। একই সঙ্গে অভিযোজনের বিষয়টিও এড়িয়ে গেছেন তারা।

তিনি বলেন, লিমা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর গুরুতর চাহিদাগুলোকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। শঙ্কার কথা হলো, লিমার ফলাফল চরম বিপদাপন্ন দেশগুলোর জানমাল, জীবিকা, বাস্তুসংস্থানের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করবে। ন্যায্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’-এর এই সমস্ত বিষয়গুলো অবশ্যই ২০১৫-এর চুক্তিতে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।

                                         ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হবে জলবায়ু সম্পর্কিত সম্মেলন-কপ২১

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবীর বলেন, দোহার জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু ইস্যুতে নারীর অধিকার নিয়ে যে অগ্রগতি হয়েছিল, তা পেরুতে এসে হোঁচট খেয়েছে। ‘ক্লাইমেটে জেন্ডার ইক্যুয়িটি’-তে আমরা বড় ধরনের ধক্কা খাই। পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের কথা মাথায় না নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা, প্রশমন যাই বলি না কেন, তা সম্ভব না।

তিনি বলেন, পরিবেশগত বিষয়গুলো ছেড়ে দেওয়ার উপায় নেই। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ২০১৫ সাল ব্যাপী একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়াকে একটা বড় ভূমিকা রাখতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের অধিকার আমাদেরকেই প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের ফেলো  গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের সবার দাবি, পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলনে আমরা ন্যায্যতা পাবো।

আলোচনায় উঠে আসে, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খুবই সামান্য। এই বরাদ্দ ২০২০ সালের মধ্যে বৃদ্ধি করে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নেই, যা যথাযথ প্রতিশ্রুতি, চিন্তা এবং উন্নত বিশ্বের কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবের ফলাফল।

এ ছাড়া উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি দরিদ্র, বিপদাপন্ন দেশগুলোর ন্যায্যতা নিশ্চিত করার অধিকারের আহ্বান বরাবরের মতই অস্বীকৃত রয়ে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।  

অনুষ্ঠানে প্যারিসের জন্য কার্যকরী পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। ২০১৫-এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য কপ২১ বৈশ্বিক নেতাদের জন্য শেষ সুযোগ। সেখানে তারা যাতে প্রমাণ করতে পারেন যে, তারা পৃথিবীর কল্যাণের জন্য উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করতে সম্মত এবং ইচ্ছুক। ২০১৫-এর সব আলোচনা, নীতি নির্ধারণী এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে অবশ্যই নারী-পুরুষ সমতা মূলকেন্দ্র বিন্দুতে থাকতে হবে। অন্যথায় পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়বে এবং টেকসই উন্নয়নের ধারণা কেবলই স্বপ্ন থেকে যাবে।  

আলোচকরা বলেন, জলবায়ু সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনায় বর্তমান অগ্রগতিকে মাথায় রেখে জাতীয় পর্যায়ে, সুশীল সমাজের দায়িত্ব হলো সরকারের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করা। বিশেষ করে, অনুন্নত এবং ছোট দেশগুলোর  সরকারের উচিত হবে না এমন কোনো চুক্তিতে সম্মত হওয়া, যা সাধারণ মানুষের জীবনধারণকে বাধাগ্রস্ত করবে।

বাংলাদেশের সর্বস্তরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের একত্রিত হয়ে আলোচনায় বসা দরকার এবং এই বার্তা প্রচার করা দরকার যে, বাংলাদেশ এমন কোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক গ্রহণ করবে না, যা যথার্থ ও ন্যায়সঙ্গত নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।