ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

মাছের বন্ধু টিকি হাঁস

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
মাছের বন্ধু টিকি হাঁস ছবি : আবু বকর সিদ্দিক / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): শীতের আগমনে পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখরিত দেশের হাওরাঞ্চল। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ থেকে তীব্র শীত মৌসুমে আত্মরক্ষার্থে দক্ষিণে চলে আসে বিভিন্ন প্রজাতির এসব পাখি।

এদের পরিযায়ী পাখি (Migratory Bird) বলা হয়। কেউ কেউ আবার তাদের ভুল শব্দে অতিথি পাখিও বলে থাকেন।

টিকি হাঁসও এক প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। এর ইংরেজি নাম Tufted Duck। হাঁসেদের মধ্যে এই পাখিটি সবচেয়ে গভীর পানিতে ডুব দিতে পারে।

ডুব দিয়ে ও সাঁতার কেটে পানির গভীরে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে পারে এমন দক্ষ হাঁসের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে টিকি হাঁস।   

গত বছর বাইক্কা বিলে পাখিটি প্রথম দেখিয়েছিলেন প্রয়াত মিরাশ ভাই। বাইনোকুলারের সাহায্যে পাখিটিকে ভালো করে দেখেছিলাম। আকারে ছোটো পাখিটির সব সৌন্দর্য যেন তার ওই টিকিতেই। মাথার পেছনে টিকি আছে বলে এর নাম টিকি হাঁস।
 
পাখি বিষয়ক প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, টিকি হাঁসের বিশেষ দিক হলো, সে ডুব দিয়ে দশ-বারো ফুট পানির নিচের বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ খেতে পারে। যেখানে অন্য হাঁসেরা মাত্র এক-দেড় ফুট পানির নিচে ডুব দিয়ে লতাগুল্ম খেতে পারে। টিকি হাঁসের মতো পানির এতো গভীরে গিয়ে আর কোনো হাঁসই খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। টিকি হাঁসের পরেই এভাবে খাবার সংগ্রহ করতে পারে ভুতিহাঁস (Common Pochard)। আর কিছুটা পারে রাজ সরালি (Fulvous Whistling Duck)।

তিনি আরও বলেন, এ হাঁসের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- এরা বারবার ডুব দেয় এবং সাঁতার কেটে পানির নিচে যায়। এর ফলে পানি ভেতরে প্রচুর অক্সিজেন প্রবেশ করে। ছবি তুলতে গিয়ে দেখা গেছে, টিকি হাঁস ডুব দেওয়ার ফলে পানিতে প্রচুর বুদবুদ উঠছে।

এভাবে অক্সিজেন প্রবেশের ফলে জলাশয়ের উদ্ভিদ ও মাছেরা ভালো থাকে। পানির নিচে ঠিকমতো অক্সিজেন না পেলে মাছেরা মারা যেতে পারে। টিকি হাঁস পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ করার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, বলেন এ পাখি বিজ্ঞানী।   

এ হাঁস সম্পর্কে ইনাম আল হক আরও বলেন, এরা আমাদের দেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি। দৈর্ঘ্যে ৪৩ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৭৫০ গ্রাম। প্রজনন মৌসুমে ছেলে হাঁসের পিঠ চকচকে কালো এবং দেহতল সাদা দেখায়। মেয়ে হাঁসের পিঠ ঘন বাদামি। তাদের মাথার পেছনে বড় ঝুলন্ত ঝুঁটি থাকে।

পাখি বিষয়ক আলোকচিত্রী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এরা আসলে মাইগ্রেটরি বার্ড। দক্ষিণে যাওয়ার পথে নিচে যেকোনো জলাভূমি দেখলেই এরা নামে। সম্প্রতি ফেনী ও মিরসরাইয়ের মাঝামাঝি ফেনী নদী থেকে টিকি হাঁসের এ ছবিগুলো তোলা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
বিবিবি/আরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।