ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

রাস্তা পারাপারে প্রাণ হারাচ্ছে বন্যপ্রাণি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৬
রাস্তা পারাপারে প্রাণ হারাচ্ছে বন্যপ্রাণি

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ব্যস্ততম সড়কে প্রায়ই মারা যাচ্ছে বন্যপ্রাণি। বিশেষত রাতের বেলা খাদ্য সংগ্রহে বন্যপ্রাণি এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে।

তখনই গাড়ির তীব্র আলো মৃত্যুযন্ত্রণা নিয়ে হাজির হয় তাদের সামনে! রাস্তা পারাপারে বন্যপ্রাণির এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু বিপন্ন বন্যপ্রাণির বাংলাদেশে সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দুই পাশে রয়েছে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলার একমাত্র পাকা সড়ক। সড়ক পারাপারের সময় চলন্ত যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে লাউয়াছড়ার বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। মৃত্যু তালিকায় রয়েছে শেয়াল, মেছো বাঘ, বানর ও অজগর সাপসহ বিরল প্রজাতির প্রাণী।

শুধু লাউয়াছড়াতেই নয়; শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার মহসড়কের দক্ষিণ লামুয়া (মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার সংলগ্ন) স্থানে রাতে বেলায় শেয়াল মারা যাচ্ছে নিয়মিত। এই সড়কের পূর্বকোণে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। পশ্চিমের কিছু অংশে বসতবাড়ি এবং বাকি অংশ হাইল হাওর এলাকা। এসব স্থানেই দ্রুতগতির যানবাহনে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রাণ হারায় বন্যপ্রাণিরা। কখনও কখনও চলন্ত গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে সাপ।

লামুয়া এলাকার ঠেলাগাড়ি চালক আবদুল মজিদ জানান, প্রায়ই এখানে শেয়াল মারা যাচ্ছে। রাতে রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাক-বাসের চাকায় প্রাণ হারাচ্ছে তারা।

সংরক্ষিত উদ্যান কিংবা মৌলভীবাজারের বিভিন্ন ছোটবড় পাহাড়-জঙ্গলের পাশেই পাকা সড়কগুলো ক্রমশ বন্যপ্রাণিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, যে জায়গাগুলো দিয়ে সাধারণত বন্যপ্রাণিরা পারাপার হয়, সেই জায়গাতে গাড়ির চালকদের জন্য রোডসাইন বা সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। ‘সাবধান, এখানে প্রাণীরা পারাপার হয়’ -এ ধরনের কিছু টাঙিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন দেশে বন্যপ্রাণির সংরক্ষিত এলাকা বা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যের পাশের সড়কগুলোতে রোডসাইন দেওয়া রয়েছে। আমরাও এ উদ্যোগ নিতে পারি।

আরেকটি বিষয় করা যেতে পারে, ‘অ্যানিমেল পাস’ তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ এ মাধ্যমে সড়কের নিচ দিয়ে প্রাণিরা পারাপার হবে। তখন আর তাদের ব্যস্ততম সড়কে উঠতে হবে না। এসব উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগকেই নিতে হবে বলে জানান ড. মনিরুল খান।    

বাংলানিউজের পক্ষ থেকে সড়কে বন্যপ্রাণির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধের বিষয়ে প্রফেসর মনিরুল খানের দু’টি উদ্যোগের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ডেপুটি চিফ (প্ল্যানিং অ্যান্ড প্রোগ্রামিং) মো. রবিউল ইসলাম বিষয়টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বাংলানিউজকে বলেন,  আমাদের মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সভায় সড়কে বন্যপ্রাণির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সমস্যাটি আমি উত্থাপন করবো।   

তিনি বলেন, তবে সবচেয়ে ভালো হয় কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যদি মাঠ পর্যায়ে একটি জরিপ করে আমাদের তথ্য দেয় যে, দেশব্যাপী আমাদের জাতীয় বনগুলোর ঠিক কোন কোন স্থানের সড়কে বন্যপ্রাণি মারা যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের এরকম একটি জরিপ হাতে পেলে আমরা একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে এই উদ্যোগ নিতে পারি।

বন্যপ্রাণি সংরক্ষক ও আলোকচিত্রী কামরুজ্জামান বাবু বলেন, রোডকিলিং আমরা কখনও সাপোর্ট করি না। এটা শুধু শেয়াল না; ওয়ার্ল্ডলাইফের যে কোনো প্রাণীর বেলাতেই হোক না কেন। বন্যপ্রাণির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঠেকাতে আরেকটি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, তা হলো- সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে বা পাশ দিয়ে রাস্তা না করে ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে রাস্তাটিকে বনের একপ্রাপ্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিয়ে যাওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৬
বিবিবি/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।