জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: সুইমিং পুল সংলগ্ন জলাশয়টি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সবচেয়ে বড় জলাশয়। ২০১৪ সালে ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে জলাশয়টি ইজারা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অথচ শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আবাস হয়ে উঠতো এ জলাশয়টি।
বিষয়টি ওইসময় জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক জলাশয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবাদ করে সংস্কারের দাবি জানান।
একই সঙ্গে সময় ‘অতিথিরা বসবে কোথায়!’ শিরোনামে বাংলানিউজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সেই বাঁধ নির্মাণ করে এবং ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে। বাঁধ নির্মাণের ফলে জলাশয়টিতে আগের মতো ফের পানিতে ভরে ওঠে। শুধু তাই নয়, চলতি মৌসুমে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমিয়েছে এ জলাশয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয়, প্রীতিলতা ও জাহানারা ইমাম হল সংলগ্ন জলাশয় ও সুইমিং পুল সংলগ্ন জলাশয়টিতে এই শীতে এসেছে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। প্রশাসনিক ভবনের সামনের জলাশয়, প্রীতিলতা ও জাহানারা ইমাম হল সংলগ্ন জলাশয়ে দর্শনার্থীর অত্যাচার বেশি। তাই পাখির সংখ্যা কম। তবে সুইমিং পুল সংলগ্ন জলাশয়টিতে দেখা মিলছে সবচেয়ে বেশি পাখির। পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত এ জলাশয়।
‘অতিথি পাখি আসছে না’- এই যুক্তিতে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের মে পর্যন্ত সুইমিং পুল সংলগ্ন এ জলাশয়টি ইজারা দিয়েছিলো প্রশাসন। ইজারা শেষ হওয়ার পর জলাশয়টি ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে ছোট মাছ ধরার জন্য আবারো ইজারা দেয় প্রশাসন। ইজারাদার জলাশয়ের পশ্চিম পাশে বাঁধ কেটে পানি সেচে মাছ ধরে ফেলে রেখে যায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় এ জলাশয়টি পরিণত হয় গো-চারণভূমিতে।
সে সময় প্রতিবাদ না জানালে আজও জলাশয়টি শুকনো অবস্থায় পড়ে থাকতো বলে মনে করছেন প্রতিবাদকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
অর্থনীতি বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান বলেন, শীতের অতিথি পাখি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য আমাদের ক্যাম্পাস সর্বমহলে পরিচিত। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অবহেলার কারণে আমরা ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য হারাতে বসেছি। প্রতিবাদ না করলে ক্যাম্পাসের বৃহৎ এ জলাশয়টিও হয়তো শুকনো অবস্থায় পড়ে থাকতো। প্রশাসনের উচিত নিজ উদ্যোগে এসব বিষয়ে নজর দেওয়া এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা।
ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, আমাদের প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা সচেতন হয়ে যদি এগুলো রক্ষা করতে চাই তাহলে সম্ভব। এটা তার একটি দৃষ্টান্ত। শুধু এ জলাশয় নয়, পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রশাসনকে আরও যত্নশীল হতে হবে।
এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. নুরুল আমিন বলেন, প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে জলাশয়গুলোতে পর্যাপ্ত পানি থাকায় এ বছর প্রচুর পাখি এখানে এসেছে। আগামীতে জলাশয়টি আর ইজারা দেওয়া হবে না।
** অতিথিরা বসবে কোথায়!
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৫
এএ