জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, পাখ-পাখালি ও জীবজন্তুর অভয়ারণ্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। দেশের একমাত্র আবাসিক এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শীতে পরিযায়ী পাখির আগমন সে সৌন্দর্যের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।
শুধু পরিযায়ী পাখিই নয়, দেশীয় পাখির বিচরণ ও কিচির-মিচির গুঞ্জন ক্যাম্পাসবাসীকে করে মুগ্ধ সবসময়।
২৩৮ প্রজাতির পরিযায়ী ও ৪৫২ প্রজাতি দেশীয় মিলে মোট ৬৯০ প্রজাতির পাখি দেখা যায় বাংলাদেশে। পরিযায়ী পাখির ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এদের মধ্যে ৫৬ প্রজাতির পারিযায়ী ও ১৩৯ প্রজাতির দেশীয় পাখি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পাখি মেলার আহ্বায়ক মো. কামরুল হাসানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখি প্রথম আসে ১৯৮৬ সালে। পাখির দেখা পাওয়া যায় ১৯৫ প্রজাতির। এদের মধ্যে প্রায় ৫৬ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। যার ৯৮ শতাংশ ছোট-বড় ১০ প্রজাতির সরালি হাঁস জাতীয় পাখি। মূলত সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, জিনজিয়াং, নেপাল ও ভারতের দ্বীপপুঞ্জীয় অঞ্চল থেকে পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে।
তিনি বলেন, চলতি বছর ক্যাম্পাসে যে সব পরিযায়ী পাখি বেশি দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, ভুতি হাঁস, বালি হাঁস, নক্তা হাঁস অন্যতম। এছাড়া ছোট পাখিদের মধ্যে রয়েছে- ব্রাউন শ্রির্ক, গ্রে বেকর্ড শ্রির্ক, ওবলার, গ্রে হেডেড ঈগল প্রভৃতি। সরালি হাঁস জাতীয় পাখিগুলো রাতে ক্যাম্পাসে থাকে না। তারা পার্শ্ববর্তী হাওর ও বিলে খাবার খেতে যায়। আবার সকাল হতে হতেই ফিরে আসে ক্যাম্পাসে। পরিযায়ী পাখির মধ্যে ছোট সরালি জাতীয় পাখিগুলো এখানে এসে ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। এ কারণে প্রতিবছর ৮/১০ জোড়া পাখি এখানে থেকে যায়।
এ অধ্যাপক আরও জানান, ক্যাম্পাসে নিয়মিত ৭৮ প্রজাতির পাখি বাসা বাঁধে। কিন্তু বকজাতীয় পাখিগুলো সারা বছর এখানে অবস্থান করলেও বাসা বাঁধে না। ঈগলজাতীয় পাখিগুলো বড় বড় গাছে বাসা বাঁধে। কিন্তু ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত বড় গাছ না থাকায় তাদের আসা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত দেখা মেলে এমন দেশীয় পাখিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ডাহুক, টিয়া, ভোমড়া ছোটন, ভরত, খুঁড়ুলে পেঁচা, শামুক খোল, বাবুই, হলদে পাখি, শালিক, মৌটুসী ইত্যাদি। সারাবছরই এ পাখিগুলো ক্যাম্পাসে বিচরণ করে। ক্যাম্পাসের ছোট-বড় গাছ ও ইটের তৈরি ভবনের ফাঁকে বাসা তৈরি করে।
সাধারণত সরকারি ছুটির দিনগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন প্রাখি ও প্রকৃতিপ্রেমীরা। অনেকে আসেন ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাখি ও জীববৈচিত্র্যের ছবি তুলতে। এছাড়া ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও অবসর পেলে দলবেঁধে পাখির ছবি তুলতে বের হন।
পাখির কিচির মিচির গুঞ্জন, ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো, আর পানিতে সাঁতার কাটার দৃশ্য দর্শনের মধ্যদিয়ে প্রতিটি দিন পেরিয়ে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশেষ করে শীতকালে পাখিপ্রেমীদের সরব উপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় মেলায় পরিণত হয়। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের বাইনোকুলার দিয়ে লেকে মুক্ত বিহঙ্গ দর্শনে সময় কাটাতে দেখা যায়। এসময় কিছুক্ষণ পরপর পাখিরাও এক লেক থেকে আরেক লেকে উড়ে পাখিপ্রেমীদের আনন্দ দেয়।
জীববৈচিত্র্যের অন্যতম উপাদান পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও ‘পাখি মেলা’ আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ‘ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার’। ‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ১৪তম ‘পাখি মেলা ২০১৬’ অনুষ্ঠিত হবে।
মো. কামরুল হাসান জানান, শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে মহুয়া তলায় পাখি মেলা উদ্বোধন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
মেলার অন্য আয়োজনের মধ্যে রয়েছে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপে শিশু কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, স্টল সাজানো প্রতিযোগিতা (পাখির আলোকচিত্র ও পত্র-পত্রিকা প্রদর্শনী), আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা (অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে), পাখি বিষয়ক প্রতিযোগিতা (সকালের জন্য উন্মুক্ত) এবং পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬
এএ/