ভোলা: ভোলার চরাঞ্চলগুলোতে নির্বিচারে অতিথি পাখি নিধন চলছে। শীত মৌসুমে সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে অতিথি পাখি এলেও তারা শিকারিদের কারণে নিরাপদে বিচরণ করতে পারছে না।
পাখি রক্ষায় বন-বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন না করায় শিকারিদের দৌরাত্ম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিকারিরা যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি শীত মৌসুমে ভোলার উপকূলের দৌলতখানের নেয়ামতপুর, মদনপুর, চরফ্যাশনের তারুয়া, কুকরী-মুকরী, ঢালচর, চর পালিতাসহ ২৫/৩০টি চরে এসেছে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ অতিথি পাখি। এসব পাখিদের আগমনে এবং তাদের কলতানে মুখর হয়ে উঠছে চরগুলো। দুর্গম এসব চরাঞ্চল পাখির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হওয়ার কথা থাকলেও পাখি শিকারিদের কারণে তাদের নিরাপত্তা নেই। নেই পাখি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ।
খাদ্যের সন্ধানে রঙ-বেরঙের পাখা মেলা এসব পাখি উড়তে গিয়েই মারা পড়ছে শিকারিদের হাতে। নির্বিচারে চলছে পাখি শিকার।
পাখি শিকার প্রত্যক্ষকারী শাহে আলম নামে এক ব্যক্তি জানান, খাদ্যের সন্ধানে বালি হাঁস চরে আসলে শিকারিরা এসব পাখি বিষটোপ দিয়ে শিকার করছে।
স্থানীয় শরিফুল বলেন, ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে চরে ছিটিয়ে দেয় শিকারিরা। অতিথি পাখিরা এ ধান খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়লে পাখি আটক করে তারা। কখনও কখনও বিষ খেয়ে পাখিগুলো মরে চরে পড়ে থাকে।
জেলে লোকমান বলেন, মাছ শিকার করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই দেখি এক শ্রেণির চক্র পাখি নিধন করছে।
আরেক জেলে বলেন, নদী ও চরের বিভিন্ন এলাকায় রাতের আধারে ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেয়। পরে খুব ভোরে পাখিগুলো নিয়ে যায় শিকারিরা। এসব পাখি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিষটোপ মিশ্রিত মৃত ও জীবিত পাখি বিভিন্ন হাত ঘুরে চলে আসছে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয়। এসব পাখির মাংস হোটেলগুলোতে চাড়া মূল্যে বিক্রিও হচ্ছে। ভোক্তারা না জেনে এসব অতিথি পাখি খেলেও চরমভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার শিকারিদের কাছ থেকে পাখি কিনে বাড়িতে রান্না করে খাচ্ছেন।
ভোলার সিভিল সার্জন ডা. ফরিদ আহামদ বলেন, বিষ দিয়ে শিকার করা এসব পাখি খেলে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, অতিথি পাখি শিকার বন্ধে প্রতিটি রেঞ্জ থেকে টহল টিম কাজ করছে। এছাড়া, চরে পাখি রক্ষায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ভোলা কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট খালিদ বলেন, পাখি রক্ষায় টহল টিম নিয়মিত টহল দিচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, চরে পাখি শিকারের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। শিকারিদের আটক করতে প্রত্যেক থানায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শীতকালে খাদ্যের সন্ধানে দূরবর্তী স্থান থেকে আসে অতিথি পাখিরা। অতিথি হলেও তারা এ দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি শীতের মৌসুম যেন পূর্ণতা পায় তাদের উপস্থিতিতে। শিকারিদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করা না গেলে দিন দিন এসব পাখির আগমন কমে যাবে। তাই নিজেদের স্বার্থেই পাখি রক্ষায় ভূমিকা রাখা জরুরি বলে মনে করেন সচেতন সমাজ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
এমজেড/