ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

চায়ের প্রুনিং শেষ, এখন অপেক্ষা কুঁড়ির

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
চায়ের প্রুনিং শেষ, এখন অপেক্ষা কুঁড়ির ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): চা-বাগান এখন রুক্ষ। সবুজের পাত্তা নেই।

পাতার উপরের ডালগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। এতে সবুজহীন হয়ে গাছগুলো এখন ধূসর। হরিণের শিংয়ের মতো খাঁড়া খাঁড়া ডাল প্রতিটি চা গাছে। টিলার পর টিলা চা গাছগুলো ন্যাড়া ভঙ্গিমায় ওভাবেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে।

চা-বাগানে প্রুনিংয়ের সময় শেষ। গাছের সুরক্ষার জন্য পর্যায়ক্রমে দু’তিন বছর পরপর প্রুনিং করা হয়। প্রুনিংয়ের বাংলা ‌‍‌ছাঁটাই। তবে চা বাগানের ভাষায় একে কলম করা বলে।  

ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) সাবেক টি-প্ল্যান্টার বি কে ভট্টাচার্য পুষ্প বলেন, ছাঁটাই আর কলম কিন্তু এক জিনিস নয়। কলম করা হয় রোপণ সামগ্রী তৈরি করার জন্য এবং এর উদ্দেশ্যই হলো নতুন চা চারা বা চা-গাছ উৎপন্ন করা। আর ছাঁটাই করা হয় চা-গাছের পছন্দসই আকৃতির জন্য। এর উদ্দেশ্য চা-গাছের দৈহিক বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা।

তিনি আরও বলেন, প্রুনিংয়ের প্রকারভেদ আছে। কোন সেকশনের চা গাছগুলোতে কোন ধরনের প্রুনিং হবে তা সেকশন ভিত্তিক প্লাকিং-টেবিল (Plucking Table) তালিকা পর্যবেক্ষণ করে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়। যত আগে প্রুনিং করা হবে তত আগে পাতা চয়ন (Plucking) শুরু হবে।  

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাগছড়া চা-বাগানে গিয়ে দেখা গেলো চির সবুজ গাছগুলো আর নেই। তাদের সবারই মাথা কাটা গেছে! পাশে দাঁড়িয়ে থেকে সর্দার কীভাবে কাটতে হবে শ্রমিকদের তার নিদের্শনা দিয়ে থাকেন।  

সর্দারের নাম জয়রাম পাশি। প্রুনিং সম্পর্কে তার কাছে কিছু জানতে চাইলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছু বলা যাবে না বলে বাংলানিউজকে সাফ জানিয়ে দেন।  

পরে অবশ্য বলেন, একেকটা চারার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ ইঞ্চি। প্রুনিং করতে হয় ২৬ বা ২৮ বা ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত। তবে ইয়াং ট্রি (তরুণ গাছ) প্রুনিং করতে হয় কিছুটা কম ১৬ বা ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত।

তিনি আরও বলেন, চা-বাগানের একেক সেকশনের চা গাছের বয়স কিন্তু একেক রকম। কোনোটা ৫ থেকে ১০ বছর। আবার কোনোটা ২০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত রয়েছে। বয়সের উপর ভিত্তি করে প্রুনিংয়ের কাটার গভীরতা নির্ভর করে। তবে ৬০ বছর হয়ে গেলে চা গাছ তার উৎপাদন ক্ষমতা হারায়। তখন পুরাতন চা গাছ তুলে নতুন চারা রোপণ করতে হয়।

জয়রাম আরও বলেন, একেকটি সেকশনে তিন-চার বছর পর পর প্রুনিং করা হয়। যেমন ধরুন ১১ নম্বর সেকশনে ২০১৬ সালে ২৬ ইঞ্চিতে যদি প্রুনিং করা হয়, তবে এই সেকশনেই ২০১৯ সালে ২৮ ইঞ্চিতে প্রুনিং করা হবে। কাটমার্ক থেকে ৪ ইঞ্চি উপরের পাতা উত্তোলন করতে হবে।   

শ্রমিক সম্পর্কে জয়রাম বলেন, আমার দলে চল্লিশজন চা-শ্রমিক রয়েছেন। একেক জনকে প্রতিদিন ২৫০টি করে চারা ছাঁটাই করতে হয়।

চা-পাতা গজাতে দু’তিন মাস সময় লাগে। তবে দ্রুত পাতা গজাতে হলে প্রাকৃতিক বৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। মার্চের মাঝামাঝি থেকে চা পাতা তোলা শুরু হবে বলে জানান চা শ্রমিক সর্দার।  

ফিলনে চা বাগানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) গোলাম মোহাম্মাদ শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, গলাকাটা ছাঁটাই (Collar Prune), মধ্যম ছাঁটাই (Medium Prune), হালকা ছাঁটাই (Light Prune) মূলত এই তিনটি ছাঁটাই রয়েছে। এছাড়া আরও কিছু ছাঁট-পদ্ধতি রয়েছে। আসলে এগুলো নির্ভর করে চা-গাছের বয়স এবং উৎপাদন ক্ষমতার উপর।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।