শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : একটি ভ্রান্ত ধারণার ফলেই মরতে হচ্ছে চড়ুই পাখিদের। চড়ুই পাখির মাংস খেলে মানুষের যৌনক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে– এ ভুল বিশ্বাসের ফলে এয়ারগানসহ নানা ধরনের বন্দুকের গুলির আঘাতে শহরে-গ্রামে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হচ্ছে নিরীহ চড়ুইদের।
কিছু মানুষ এই ভুল তথ্যটি অন্যদের কাছ থেকে শুনে বিশ্বাস করে বসেন। সুযোগ পেলেই তারা খুঁজতে থাকেন চড়ুইয়ের মাংস। এমন ভুল বিশ্বাসনির্ভর কিছু মানুষেরা সংগঠিত হয়ে নামেন চড়ুই নিধনে।
এদিকে রোববার (২০ মার্চ) উদযাপিত হচ্ছে চড়ুই দিবস।
মাত্র পনের সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এ পাখির নাম ‘পাতি-চড়ুই’ বা ‘ঘর-চড়ুই’। ইংরেজিতে House Sparrow বলে। তবে ‘চড়ুই’ নামেই এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। ‘চিরক-চিরক-চিরক...’ শব্দে সে আমাদের বাসা-বাড়ি চারদিকে মুখরিত করে রাখে। পুরুষ চড়ুইয়ের দেহ খয়েরি এবং স্ত্রী চড়ুইয়ের দেহ ধূসর।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক ও লেখক ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘চড়ুইয়ের মাংসে মানুষের যৌনতা বৃদ্ধির কোনো সম্পর্কই নেই। এটি নিতান্তই ভুল ধারণা। চড়ুইয়ের মাংসে মুরগিসহ অন্যান্য পাখির মাংসের মতোই উপাদান রয়েছে। এখানে নেই শারীরিক যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো উপাদানও’।
‘পুরুষ চড়ুই পাখিটিকে যৌন সঙ্গমের সময় বারবার স্ত্রী চড়ুইয়ের ওপরে উঠতে দেখা যায় বলে কিছু মুর্খ মানুষের ধারণা এমন যে, পুরুষ চড়ুইটির যৌন ক্ষমতা অনেক। তাই তার মাংস খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। আসলে এসব ধারণা পুরোপুরি ভুল’।
‘পুরুষ চড়ুইয়ের এমন ঘন ঘন আচরণের একমাত্র কারণ- সে যৌনকর্মে অদক্ষ। চড়ুই ছোট প্রাণি বলে তাদের শরীরের যৌনতার স্থানে ছোট ছিদ্র অবস্থিত। তাই পুরুষটিকে ওই ছিদ্রে লক্ষ্য স্থাপনের জন্য বহুবার বহু সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। প্রকৃতিগতভাবেই তারা এমন’।
দেশব্যাপী চড়ুইয়ের অবস্থান সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, ‘আমাদের লোকালয়ে যে চড়ুই পাখি এবং যাকে সবাই চড়ুই পাখি বলে চেনে এরা বেশ ভালো আছে। আমরা আমাদের ঘরে-ফ্ল্যাটে যে ধরনের বিষাক্ত বা কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে আমাদের ঘরের কোণায় বসবাসরত চড়ুইদের ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা এখনো বিপদজ্জনক অবস্থায় যায়নি। তাতেই আমরা খুশি’।
‘কলকাতা এবং লন্ডনে কথা উঠেছে যে, এই চড়ুই পাখিটাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু ঢাকা শহরে এরা অনেক ভালো অবস্থানে এখনো আছে’।
ঘর-চড়ুই বেশি হলেও গাছ-চড়ুইয়ের সংখ্যা খুবই কম বাংলাদেশে। সিলেট অঞ্চলে মাঝে মাঝে দেখা যায় বলেও জানান এই পাখিবিজ্ঞানী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৬
বিবিবি/এএসআর